আমি বলছি না যে, বাবা-মা সঙ্গে থাকলে আনন্দ হয় না। তবে বাবা-মাকে ছাড়া অন্যরকম এক অনুভূতি হলো এবার। কিছুটা নিজ সচেতনতা আর কিছুটা স্বাধীনতা। সব মিলিয়ে বেশ দায়িত্ব নিয়ে চড়তে হলো এবার। আমি যে একেবারে একা ছিলাম, তা-ও কিন্তু নয়। ভাইয়া ছিল সঙ্গে। বাবা-মা থাকলে মনে হয় ভালোবাসার অত্যাচার। আমাদেরকে অতিরিক্ত খেয়াল রাখে, সাবধান করে। যেগুলো কিছুটা বিরক্তিকরও মনে হয় বটে। তাই বাবা-মাকে ছাড়া স্বাধীনতাটা বেশি অনুভূত হয়।
ট্রেনের নাম 'পাহাড়িকা এক্সপ্রেস'। চট্রগ্রাম থেকে কুমিল্লায় যাব। সকাল ৯টায় ট্রেন, তাই আমরা কিছু আগেই পৌঁছে যাই স্টেশনে।
ট্রেনটা দেখতে বেশ আধুনিক ও সজ্জিত ছিল। এটা দেখে মনটা আরও ভরে গেল। ভ্রমণের সময় প্রায় সবাই চায় জানালার পাশে বসতে। আমিও তার ব্যতিক্রম না। কারণ জানালার পাশে বসলে অনেক কিছু দেখা যায় এবং দমবন্ধ ভাবটা লাগে না। যেই কথা সেই কাজ! আমার আসনটাও পড়ে গেল একদম জানালার পাশে। আমার উত্তেজনা যেন আরও কয়েক ধাপ বেড়ে গেল।
হালকা দোলা দিয়ে, সাইরেন বাজিয়ে যাত্রা শুরু করল আমাদের পাহাড়িকা। প্রথমে ঝিমঝিম ও পরে এলোমেলো বাতাসে উড়ছিল চুলগুলো। বাইরে লক্ষ্য করলাম সারি সারি পাহাড়৷ যেন সর্বস্ব মেলে ধরে আছে মুক্ত প্রকৃতি। ট্রেনের অপূর্ব ছন্দ আমাকে বার বার মুগ্ধ করছিল। পাহাড়ি বাগান, ফসলের মাঠ, ছোট ছোট নদীসহ বিভিন্ন জংশন ও স্টেশনগুলোকে মনযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলাম। বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন যখন থামে মানুষের কী হুড়োহুড়ি! সবার কাঙ্ক্ষিত পাহাড়িকাকে পেয়ে যেন খুশি সবাই।
ট্রেনকে ঘিরে কিছু মানুষের জীবিকা, সেটা এবার ভালো করে আন্দাজ করতে পারলাম। করোনা মহামারিতে দেশ যখন অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে ছিল, তখন বন্ধ ছিল ট্রেন। এই মানুষগুলো তখন না জানি কী করে জীবিকা চালিয়ে নিয়েছে!
যাই হোক, ধীরে ধীরে গন্তব্যের দিকে ট্রেন এগিয়ে যেতে লাগল। ইতোমধ্যে পার হয়ে গেছে তিন ঘন্টা। অবশেষে পৌঁছে গেলাম কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। কিন্তু এই ভ্রমণ আমাকে যা শেখাল এবং যেভাবে মনকে আন্দোলিত করল তা হয়ত মনে থাকবে অনেকদিন। তাই ভাবলাম হ্যালোর মাধ্যমে সবার সঙ্গে আমার আনন্দের কথাটা ভাগাভাগি করে ফেলি।