তারপর কিছুদিন কোচিং যাওয়ার পর আমার মা বাবা বললেন কোচিংয়ে যাওয়া যাবে না।
এরপর তো আমার হাতে অঢেল সময়। কী করি কী করি! পেয়ে গেলাম গুরু দায়িত্ব। বাসা জীবাণুমুক্ত করার কাজে লেগে গেলাম।
আমার বড় দুই দাদা মানে আমার ভাইয়েরা আমাকে দায়িত্ব দিয়ে দিলেন। বড় দাদা ব্যাঙ্কে চাকরি করেন, একদিন শুনলাম ব্যাঙ্ক জীবাণুমুক্ত করা হবে বলে তাদের অফিস তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দেবে। সেদিনই সিদ্ধান্ত হলো আমাদের বাসাও জীবাণুমুক্ত করা হবে।
একদিন রাতে বড় দাদা স্প্রে, মপ এবং ব্লিচিং পাউডার আনলেন। এরপরের দিন সকালে দাদা ঘুম থেকে ওঠার পর আমরা জীবাণুমুক্তকরণ শুরু করি। কিন্তু আমাকেই সেদিন বেশি কাজ করতে হয়েছে।
দাদা বললেন, "আমি অফিস থেকে ফেরার পর প্রতিদিন আমাকে স্প্রে করবে।"
তাই দাদা অফিস থেকে আসার আগেই আমি স্প্রে বোতল হাতে তৈরি থাকি, তবে সরাসরি গায়ে কিন্তু স্প্রে করি না। এটা ক্ষতিকর। তোমরা যদি কেউ এভাবে স্প্রে কর তবে ব্যাপারটা কিন্তু অবশ্যই খেয়াল রাখবে।
এদিকে আমার আবার পড়ালেখা করতে ভালো লাগে না। যখন স্কুল খোলা ছিল আম্মুর বকা খেয়ে পড়ালেখা করতে হতো। এখন স্প্রে করার কারণে আমার রাতের পড়াটা আমার আর পড়তে হয় না।
এরপর আমি কিন্তু ঘরে জীবাণুনাশক স্প্রে করার দায়িত্বও পেয়েছি। একদিন বড় দাদা বললেন, মাহিব এখন থেকে ঘরেও স্প্রে করবে।
শুনে কী যে খুশি হয়েছিলাম। এমনিতে বাইরে খেলতে যেতে পারি না বলে ঘরে বেশি সময় পড়ালেখা করতে হয়, স্প্রের দায়িত্ব পাওয়ায় রাতে দিনে আর বই নিয়ে বসতে হচ্ছে না। তবে একেবারেই যে পড়তে বসছি না তা না। অল্প অল্প পড়ছি। এত এত কাজ করে তো আর বেশি পড়া যায় না, তাই ধীরে ধীরে পড়ার চাপ কমে গেছে।
এসব করেই সারাদিন কেটে যায়। আর বাবা পড়তে বললেই আমি স্প্রে নিয়ে বের হই, পুরো বাসা স্প্রে করি। বাবা মা আমাকে পড়তে বললে দাদা বলেন, বেঁচে থাকলে করোনা শেষ হোক, পড়বে। এজন্য আমি দাদাকে ভালোবাসি।
আমি সন্ধ্যায় ফ্রি ফায়ার গেম খেলি। রাতে দাদার সাথে সিনেমা দেখি। সকালে আমার পাখির সাথে সময় কাটাই । এভাবে কেটে যায় আমার দিন কেটে যায়।