আমি বসেছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডের পুকুর পাড়ে। সঙ্গে ছিল আমার গিটার আরেক বন্ধু।
ছেলেটাকে ডাক দিয়ে সামনে আনি। তার বয়স এতটাই কম যে গিটার দেখে ভুলে গেছে সে আসলে কী করতে এসেছিল।
গিটারে হাত দিয়ে সে বলছিল, ‘বাইয়্যা এতা গিতার?। তারপর একটু ধরতে পেরে সে যে কী খুশি। গিটারের তারে টুং করে শব্দ হয় আর সে মজা পায়। তার আঙ্গুল দিয়ে আমি একটু গিটার বাজালাম।
তার সাথে খেলার সময় বেশ ভালো লাগছিল। নিজেকে বেশ সতেজ মনে হচ্ছিল আমার। শিশুরা কী নিষ্পাপ আর চঞ্চল।
বাদামের ঝাঁকাটা নিয়ে হাঁটতে শুরু করে সে। ডেকে এনে তাকে ২০ টাকা দেই আমি। সে টাকাটা নিয়ে আমার কোলের ওপর বাদামের দুইটা প্যাকেট রেখে যায়। আমি একটা ফিরিয়ে দিতেই বলে, বিশ টাকায় বিশটা। এত ছোট যে বিশ টাকায় দুইটা বলতেও পারে না ঠিক করে।
আমি কোনোভাবেই তাকে একটি বাদামের ঠোঙা ফেরত দিতে পারছিলাম না। সে আমাকে কোনো ভাবেই এক প্যাকেট দিতে রাজি নয়। তবে ১০ টাকা ফেরত নিলে একটা নেওয়া যাবে।
কতটা সরল! কতটা দায়িত্বশীল! আমি খুব অবাক চোখে তাকিয়ে দেখি ছোট্ট পা দুটি হেঁটে যায় অন্য ক্রেতার সন্ধানে। হয়তো বাধ্য হয়ে নয়তো তার মা কে সাহায্যের উদ্দেশ্যে। তার বয়সের তুলনায় দ্বিতীয় কারণটা সাধারণভাবেই যুক্তিহীন।
এরকম অনেক মানুষ আছে আমাদের সমাজে যারা চেয়ে খায় না, কারো কাছে হাত পাতে না; পরিশ্রম করে আয় করে।
তাই বাদাম দরকার না হলেও সেদিন কিনেছিলাম। কখনো কখনো অপ্রয়োজনেও কিছু জিনিস কিনতে হয়। নিজের প্রয়োজনে না হলেও অন্যের প্রয়োজনে! কিছু মানুষের পেটে দুই মুঠো ভাত জোগাতে, তাদের মুখে হাসি ফোটাতে। তারা তো চাইতে জানে না!