রাজবাড়ি থেকে পাবনার ঢালারচর ইউনিয়নে ঘুরতে যাই আমরা। যদিও জনপ্রিয় কোনো দর্শনীয় স্থানে যাইনি, কিন্তু বেশ উপভোগ করেছি। নদী পথে যাওয়ার সময় দুপাশে সাদা কাশবনের দৃশ্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। মনে হচ্ছিল যেন এক স্বপ্নের দেশে ভ্রমণ করতে এসেছি। আমরা প্রায় এক ঘণ্টার নৌ ভ্রমণের পর ঢালারচর ইউনিয়নের চর দূর্গাপুর গ্রামে পৌঁছাই। পদ্মা নদীর বুকে জেগে উঠা চরে জনবসতি।
বর্ষা মৌসুমে চরাঞ্চলের চারপাশ থৈ-থৈ পানিতে ডুবে থাকে। তখন এই এলাকার মানুষদের বেশ কষ্ট করে সময়টা পর করতে হয়। চলাচল, খাবার-দাবার সব কিছুতেই সমস্যা তৈরি হয়। শরৎকালে কাশফুলে সাদা হয়ে উঠে চর।
গিয়ে জানতে পারি, চর দুর্গাপুর গ্রামে নেই তেমন ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা নেই। পুরো এলাকাজুড়ে একটি সরকারি বিদ্যালয় থাকলেও তার চারপাশে পানিতে টুইটুম্বুর করে।
নৌকায় চলাচল করলেও বিদ্যালয় বন্ধ থাকে বছরের অধিকাংশ সময়। এছাড়াও সেখানে নেই কোনো ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা। পুরো ইউনিয়ন জুড়ে মাত্র একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং একটি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। চিকিৎসার জন্য তাদের অধিকাংশই শহর অঞ্চলের দিকে কিংবা নদী পার হয়ে অন্য এলাকায় যায়।
স্থানীয়দের সাথে কথা মেশার চেষ্টা করলাম। তাদের সাথে আরও কথা বলি। জানতে পারি, এখানকার স্থানীয়দের অনেকেরই দুই জায়গায় বসত-বাড়ি আছে। একটা এই চরে আরেকটা নদীর ওপারে সাধারণ ভূমিতে।
এই চর এলাকাগুলো নাকি খুবই উর্বর। বর্ষা শেষে যখন চর জেগে উঠে তখন তারা সেই ভূমিতে চাষাবাদ করেন। এখানে মূলত ধান, পাট, বাদাম, মাশকলাই, খেসারি কলাই, পটল, গম, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি নানা ফসল উৎপন্ন হয়।
উৎপাদিত ফসল মহিষের পিঠে চড়িয়ে নিয়ে আসা হয় নদীর পাড়ে। সেখান থেকে নৌকায় করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়। চর দূর্গাপুর গেলে প্রথমেই যা চোখে পড়বে তা হলো বিশাল এলাকা জুড়ে গরুর পাল। একেকজনের প্রায় ১০-১৫ টা করে গরু আছে।
ফেরার সময় মনে হলো, এখানকার মানুষগুলো খুবই সাধারণ। তারা অল্পতেই আমাকে আপন করে নিয়েছিল।