ছোটবেলার বড়দিন

বড়দিন মানেই মাসব্যাপি প্রস্তুতি আর আনন্দ। দিনরাত জপতে থাকা ‘আর মাত্র কয়েকটা দিন’।
ছোটবেলার বড়দিন

এখনের চাইতে ছোটবেলার বড়দিনই সবচেয়ে মজার ছিল। যত বড় হচ্ছি তত যেন আনন্দ মাটি হয়ে যাচ্ছে। সব কেড়ে নেওয়ার জন্য দায়ী বয়সই।

ডিসেম্বর শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করে হয়ে যেত বড়দিন উদযাপনের প্রস্তুতি। কে কী পোশাক কিনব, কোথায় ঘুরব সব পরিকল্পনা চলতে থাকতো। বড়রা তাদের মতো করে প্রস্তুতি নিত, আমরা ছোটরা আমাদের মতো করে প্রস্তুতি নিতাম।

আমাদের খ্রিস্টান পরিবারগুলো পহেলা ডিসেম্বর থেকেই বাঁশ ও রঙিন কাগজ দিয়ে বড় করে সুন্দর একটি তারা বানিয়ে অনেক উপরে ঝুলিয়ে রাখে। ২৪ তারিখ রাতে বাড়ি বাড়ি থেকে মিষ্টি ও কেকের ঘ্রাণে উদাস হয়ে যায় চারপাশ।

মামনি নানা ধরণের খাবার পিঠা তৈরি করে থাকে। সেই ছোটবেলাতেই আনন্দের সাথে এই কাজগুলোতে মামনিকে সাহায্য করতাম। শীতে থর থর করে কাঁপতাম, তবু কাজ করতাম। এ যেন অন্যরকম এক মজা।

ঘড়িতে যখন রাত ১২ টা ১ বাজতো, অর্থাৎ ২৫ তারিখের প্রথম প্রহরে ২৫টি পটকা ফাঁটিয়ে সবাই মিলে চিৎকার করে যিশুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতাম। তারপর সবাই শুরু করতাম কেক কাটা পর্ব। চলতে থাকতো ধুমধাম আয়োজন। আমরা একে কীর্তি বলি, এর মানে আনন্দ।

সকালে পিঠা, পায়েস খেয়ে গীর্জায় যেতাম। ধর্মীয় রীতিটুকু পালন করে তারপর শুভেচ্ছা বিনিময় করতে বেরিয়ে পড়তাম।

বাসায় এদিন মজার মজার খাবার রান্না করা হতো। পোলাও মাংস খেয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে পড়তাম। বিকেলে উপভোগ করতাম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আমাদের বাড়ির এই রীতিগুলো এখনো অনেককিছুই আছে। কিন্তু ছোটবেলার অনুভূতিটা এখন আর কাজ করে না। এমনকি এবার বড়দিনে নিজের পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারিনি। আক্ষেপ নেই, নিজের আত্মীয়ের সঙ্গে আছি।

শুনেছি, যিশু অহিংস ও শান্তিপ্রিয় মানুষ ছিলেন, প্রেম ও মায়া দিয়ে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। ঠিক তেমনভাবেই জীবনটা গড়তে চাই। ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ সবাই একত্রে শান্তিতে বাস করতে পারি বড়দিনে এটাই কামনা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com