কিন্তু তাও আমরা মানসিক রোগ নিয়ে কথা বললে সবাই পাগল বলে, ডাক্তারের কাছে গেলে বলবে পাগলের ডাক্তারের কাছে গেছি।
বিজ্ঞানীরা প্রায় ২০০ রকমেরও বেশী মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে বলেছেন। আর এর পেছনের অধিকাংশ কারণই থাকে পরিস্থিতির চাপ। বাংলাদেশের শিশুরা বড় হয়ই চাপ সহ্য করতে করতে করতে। কখনো পরীক্ষায় প্রথম হবার চাপ, কখনো বা ব্যাগের বোঝা টানতে টানতে নিজের স্বপ্ন হারিয়ে ফেলার মানসিক চাপ। পাশাপাশি ভেজাল খাদ্য, খেলার পরিবেশের অভাবের মতো অতি ক্ষুদ্র বিষয়গুলোই তাদের হরমোনের ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করছে। যার জন্যে অনেক শিশু মানসিক সমস্যায় ভুগছে।
এছাড়াও এ ধরণের সমস্যার অন্যতম কারণ বর্তমানের বহুল প্রচলিত এন্ড্রোয়েড মোবাইল ও শিক্ষা ব্যবস্থা বলে আমি মনে করি। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন একজন মানসিক রোগীর জেদ, রাগ বেশি থাকে। আর তারা সহজ বিষয়টাকে বেশী জটিল করে দেখে।
বিশেষত বয়ঃসন্ধিকালের কৈশোরকালীন আবেগ থেকে তারা শুরুতে কিছু স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না। ফলে তার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা দেয়।
গ্রামাঞ্চলের কিশোরেরা মানসিক সমস্যাগ্রস্থ হলে সবচেয়ে বেশি অসুবিধা ভোগ করে। বাবা মায়েরা এ ব্যপারে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। তাই মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করলেও গুরুত্ব দেন না। যদি কোনো চিকিৎসার পদক্ষেপ নিতেই হয় তা সাধারণত পীর, ওঝা, ঝাড়ফুঁকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। যার ফলে সমস্যাটা মিটে যাওয়ার বদলে আরো প্রকট আকার ধারণ করে। পরবর্তীতে তাদের আরো অনেক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়।
গ্রামগঞ্জে যেমন সরকারি ও বিভিন্ন এনজিও ক্লিনিক করা হচ্ছে আমার মতে সেখানে কাউন্সিলিং এর ও একটা বিভাগ রাখা উচিত। যেখানে নানা বয়সের ও শ্রেণিপেশার মানুষ নানা মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারে। স্কুল কলেজে কাউন্সিলিং ও মানসিক নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে 'কান পেতে রই' এর মতো বিভিন্ন অর্গানাইজেশন আছে যারা ফোনকলে মানসিক সেবা দিয়ে থাকে। এই ধরণের সেবা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে।
সবচেয়ে বড় কথা, মানসিক সমস্যাগ্রস্থদের সম্মান করতে হবে। অন্যান্য সবার চেয়ে তাদের বরং বেশি সম্মান এবং ভালোবাসা প্রয়োজন। মানসিক রোগ নিয়ে ঠাট্টা করা এবং সামাজিকভাবে তাদের হেনস্তা করার ফলেই আজকে বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এত করুণ অবস্থায় পৌঁছেছে, এত সংকোচের সৃষ্টি হয়েছে।
আরেকটা কথা হলো এসবের মধ্যেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পারিবারিক সুসম্পর্ক। প্রত্যেকটি বাবা-মা এর উচিত তার সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা এবং তাকে আদর ও শাসন করে ভালো ও খারাপ বোঝানো। তুলনা করার একটা মানসিকতা বাবা মায়ের মধ্যে আছে যেটা অচিরেই বন্ধ করা উচিত। কেননা প্রতিটি মানুষ আলাদা। শিশুকে যদি কারো মতো হতে বলা হয় তাহলে যে নিজের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করতে পারে না এবং মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়। ছোট থেকে ছোট কারণে মারধোর করা বন্ধ করা দরকার। পাশাপাশি পরিবারের সহায়তায় সমাধান করা যায় না এমন মানসিক সমস্যা থাকলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।