শহরের শিশুদের বয়স তিন অথবা চার হতে না হতেই শুরু হয়ে যায় তাদের জীবনের নতুন অধ্যায়। ভর্তি করে দেওয়া হয় স্কুলে, চাপিয়ে দেওয়া হয় বইয়ের বোঝা।
অতিরিক্ত সচেতনতা দেখাতে গিয়ে অনেক অভিভাবক তখনই শিশুকে ভর্তি করিয়ে দেন অঙ্কন, গান, আবৃত্তি, নৃত্য ইত্যাদি শেখার জন্য। কাজগুলো যে ভালো নয়, তা বলছি না। কিন্তু তথনই একটা শিশু এত চাপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে না।
শিশু একটু কথা বলতে শিখলেই আত্মীয় স্বজনরা বলতে থাকেন ওর মুখ তো হালকা, ও খুব ভালো পড়তে পারবে, ও গানে ভালো করবে সাত সতের ইত্যাদি। তখন অভিভাবকরা শুরু করেন নিজের অপূর্ণতাগুলো শিশু সন্তানকে দিয়ে পূরণ করিয়ে নিতে।
বিভিন্ন রিয়েলিটি শো তে শিশুদের দেখে ঘরের শিশুকে তুলনা করতে থাকেন। টিভিতে ও এত ভালো নাচছে তুমি কেন পারবে না, পাশের বাড়ির অমুকে সারাদিন কোচিং করে তুমি কেন পারবে না ইত্যাদি।
শিশুকে যখন প্রশংসা না করে এভাবে অন্যের সঙ্গে তুলনা করা হয় তখন সে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। অনেকসময় হীনমন্যতায় ভোগে শিশুরা। এটা তাদের বিকাশে বেশ বাধার সৃষ্টি করে। মানসিক দুর্বলতা নিয়ে বড় হয় সে।
শহরকেন্দ্রিক বসবাসের প্রবণতাটা বেশি আমাদের দেশে। বেশিরভাগ মানুষই কাজের জন্য শহরে বাস করেন। শহরের শিশুদের তাই বেড়ে উঠতে হয় কোলাহলের মাঝে। তাদের দেখা হয়ে ওঠে না নীল আকাশ, কালো মেঘ আর স্নিগ্ধ-শীতল বাতাস। হাটে-মাঠে খেলা, পানিতে দাপাদাপি অনেক অভিজ্ঞতাই থেকে যায় তাদের অন্তরালে।
প্রশ্ন করতে পারেন বড় হওয়ার সঙ্গে হাটে-মাঠে খেলা আর পানিতে দাপাদাপির কী সম্পর্ক? আমি বলব বড় হওয়ার সঙ্গে প্রকৃতির সঙ্গে মেশার সম্পর্ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুর্নিমল বসু তার কবিতায় লিখেছেন, বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোড়, সবার আমি ছাত্র। পাহাড়ের কাছে শেখার আছে, মাটির কাছেও শেখার আছে।
তাদের উপভোগ করা হয় হয় না পুকুর-নদীতে গোসল করা, ধুলা উড়িয়ে খেলা। তাদের জীবনটা অন্যভাবে উপভোগ করলেও শৈশবটা উপভোগ তাদের হয়ে ওঠে না।
শৈশবের খেলাধুলাগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। মোরগ লড়াই, মার্বেল, লাটিম ইত্যাদি খেলাগুলো এখন তেমন আর দেখা যায় না। সবাই ভার্চুয়াল খেলার দিকেই ঝুঁকছে।
সময় কাটানোর জন্য মানুষ এখর রেস্টুরেন্টে খেতে যায়। খাওয়াটাই হয়ে গেছে বিনোদন। আমার মনে হয় মাসে একবার করে হলেও সবুজ প্রকৃতিতে নিয়ে যাওয়া দরকার। তারা শিখতেও পারবে অনেক কিছু, মানসিক ভাবে প্রফুল্লও থাকবে সবসময়। যেটা তাকে পড়াশোনাতেও মনযোগী করবে।