কয়েক জন শিশুকে বাবা মায়ের হাত ধরে লঞ্চের অপেক্ষা করছে, ঘুরতে যাবে তারা। আবার সেখানেই ছিন্নমূল শিশুদের দেখলাম। তাদের কেউ ভিক্ষা করছে, কেউ আবার টার্মিনালে কুলির কাজ করে।
ঘুরতে যাচ্ছে এমন কয়েজ জন শিশুর সঙ্গে কথা বলি আমি। মা ও ভাইয়ের সাথে লঞ্চে করে বরিশাল যাচ্ছে আট বছর বয়সী মো. শফিউল্লাহ ওলি। বাসে যাতায়াত করার চেয়ে লঞ্চে যাতায়াত করতেই তার বেশি ভালো লাগে।
ওলি বলে, “আমরা বরিশাল যাচ্ছি। আমি এখান থেকে স্টিমার দেখছি, লঞ্চ দেখছি, ট্রলার দেখছি। লঞ্চে অনেক ভালো জায়গা পেয়েছি।”
শিশু হাবিবুল্লাহও বরিশাল যাচ্ছে ঘুরতে। কথা বলেই বুঝতে পারলাম সে খুব আনন্দিত ঘুরতে যাওয়া নিয়ে।
অভিভাবকরাও শিশুদের নিয়ে লঞ্চ ভ্রমণে বেশি উৎসাহি। তাদের কাছে শিশুকে সাথে নিয়ে লঞ্চ ভ্রমণ নিরাপদ মনে হয়।
লঞ্চের যাত্রী শাহনাজ আখতার বলেন, “বাচ্চাদের ইচ্ছায় লঞ্চে যাই। এটাই ভালো লাগে।“
হুট করেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। একই জায়গায় শিশুদের জীবনের কতটা পার্থক্য!
পুরো সদরঘাট জুড়েই কাজ করে বহু শিশু শ্রমজীবী। কেউ লঞ্চের মালামাল ওঠা নামার কাজ করে, কেউ কুলি আবার কেউ বা সিগারেট পান বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে।
১৬ বছর বয়সী মাসুম সদরঘাটে প্রতিদিন ঘুরে পান-সিগারেট বিক্রি করে। প্রতিদিন প্রায় তিনশ থেকে পাঁচশ টাকার মতো আয় করে ও।
পড়াশোনা করে কিনা জানতে চাইলে সে বলে, “ফাইভ পাশ করছি, পড়ালেহা করতে করতে আর ভাল্লাগে না। এর লাইগা ছাইড়া দিছি।”
মাসুমের মতোই সদরঘাটে একই ব্যবসা করে মিজান মিয়া। সে পড়েছে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। তারও ভালো লাগে না বলেই পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে।
কর্ণফুলী-১২ লঞ্চে মালামাল ওঠানো-নামানোর কাজ করে হৃদয় হোসেন জিহাদ। সে মাসিক তিন হাজার টাকা বেতনে লঞ্চে কাজ করে বছর খানেক যাবৎ। অভাব-অনটনে পড়াশোনাটা আর চালিয়ে যেতে পারেনি সে।
একই জায়গায় দাঁড়িয়ে এই বৈষ্যম্য দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিচ্ছু কি করার নেই আমাদের? এই শিশুদের জন্য?