নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করে তাদেরকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন।
অথচ যখন গুটিকয়েক শিক্ষকের ব্যবহার দেখি আমি হতাশ হয়ে যাই। শিক্ষকের সংজ্ঞা তখন আমাকে নতুন করে শিখতে হয়।
কিছুদিন আগের কথা। আমার বড় ভাই বললেন টাকার অভাবে গ্রামের এক ভাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন না।
ভাবলাম সব শিক্ষকদের কাছে যাই। সবাই মিলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে ভর্তির ব্যবস্থা হয়ে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। কজন মিলে চলে গেলাম কলেজের এক একটা ডির্পামেন্টে।
যেয়ে স্যারদের কাছে সব খুলে বললাম। আমাদের উদ্দেশ্য বুঝানোর চেষ্টা করলাম। অনেকে হেসে উড়িয়ে দিলেন। আমাদের কথা শুনে দ্রুত তারা কক্ষ ত্যাগ করতে লাগলেন। কোনো শিক্ষার্থীর সাহায্যে দেশের একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকতা আবার ৫০/১০০ টাকা দিয়ে কোনো রকম দায়মুক্ত হলেন।
একজন অসহায় শিক্ষার্থী শিক্ষকের কাছে সাহায্য চায় তখন কিভাবে একজন শিক্ষক মুখ ফিরিয়ে নেন?
একজন শিক্ষক মাসিক বেতনসহ ছাত্রদের পড়িয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে কিন্তু তার থেকে একটা শিক্ষার্থীর জন্য সামান্য সহযোগিতা না করে বরং তাচ্ছিল্য করছিল। তারা চাইলে পারতেন ভাইয়ার ভর্তির একটা ব্যবস্থা করতে।
আমার এক বন্ধু লেখাপড়ায় অনেক ভালো। কিন্তু তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। সে ভর্তি হলো বিজ্ঞান বিভাগে। রসায়ন পড়ত কলেজের এক শিক্ষকের কাছে।
শিক্ষক মাসে পাঁচশ টাকা নিয়ে বারো দিন পড়াতেন। একমাস পড়ার পর সে কোনো রকম তিনশ টাকা জোগাড় করে শিক্ষককে দেয়। স্যার ওকে বলেছেন, “টাকা দিতে না পারলে বিজ্ঞান বিভাগে পড় কেন? টাকা পুরো দিতে পারলে আসবে পড়তে, নইলে দরকার নাই।”
পরের দিন সেই বন্ধু বিভাগ পরিবর্তন করে মানবিক বিভাগে চলে আসে। টাকা না থাকলে কি কেউ বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে পারবে না? ওর বিভাগ পরিবর্তনের জন্য দায় কার, তার দারিদ্র্যের নাকি সেই শিক্ষা ব্যবস্থার?
শুধু শিক্ষিত হলে প্রকৃত মানুষ হওয়া যা না। প্রকৃত মানুষ হতে গেলে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে। ভালো খারাপ মিলে সমাজে বসবাস করি আমরা কিন্ত একজন শিক্ষার্থীর দুঃখে, কষ্টে যে শিক্ষক পাশে থাকেন না সে শিক্ষকের কাছে জাতি গঠন কী করে আশা করব।
তো দূরের কথা ধ্বংস অনিবার্য। আমি বলব না সব শিক্ষক একই তাহলে পৃথিবী অচল হয়ে যেত।