এসব করতে করতে অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার সময় হয়ে গেল। পরীক্ষায় সাত বিষয়ে ফেইল করি।
আবার ক্লাস শুরু হলো। তখনও আগের মতোই চলছিল। তবে বাড়ি থেকে শাসন শুরু হলো। এতেও আমার কোনো পরিবর্তন হলো না।
দেখতে দেখতে বার্ষিক পরীক্ষা চলে এল। এবারের প্রস্তুতি একটু ভালো। অবশেষে তিন বিষয়ে ফেইল করে কোনোভাবে সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার সিঁড়িটা পার হলাম।
বছর শেষের পরীক্ষায় এক বিষয়ে ফেইল আর সেটা গণিত বিষয়ে। মনে হতো সবথেকে কঠিন বিষয়, গণিত। সেটা হাজার চেষ্টা করলেও বোধহয় পাস করতে পারব না। অংক কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকত না।
অষ্টম শ্রেণিতেও উঠতে পারলাম। এবার পরীক্ষার ফল একটু ভালো। ৮৭ জনের মধ্যে ছেলেদের মধ্যে প্রথম হলাম। আমার আগে দশ জনই মেয়ে। আমি একাদশতম।
এবার আমি মনোযোগী হয়ে উঠলাম। একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলাম দশ জন মিলে। সেখানকার স্যার ছিলেন গণিতে খুব ভালো। ওনার কাছে পড়তে পড়তে একসময় আমি হয়ে উঠলাম গণিতে সবচেয়ে ভাল ছাত্র। সবাই আমাকে নিয়ে অবাক। স্কুলের স্যার পর্যন্ত অবাক হলেন।
আসলে আমি যখন অংক বুঝতাম না তখন বারবার সেগুলো করার চেষ্টা করতাম। এভাবে করতে করতে কোনোদিন গভীর রাত পর্যন্ত হয়েছে। আবার কোনো কোনো সময় খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসতাম।
এভাবে পুরো গণিত বইটাই আয়ত্ব করে ফেললাম। এখন যে কোনো অধ্যায় থেকে অংক দিলে আমি তা অনেকের চেয়ে কম সময়ের মধ্যে সমাধান করে দিতে পারতাম।
তখন গণিতে ভয় পাওয়া সেই আমি গণিতের জন্যই সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠলাম। যে কোচিংহোমে পড়তে গিয়েছিলাম সেখানে আমি পড়াতেও লাগলাম।
অষ্টম শ্রেণি থেকেই সহপাঠীদের বাড়িতে গিয়ে পর্যন্ত পড়াতাম। কেউ কেউ আবার স্কুল শেষে আমার বাড়িতে অংক শিখতে আসে।
নবম শ্রেণিতে উঠলাম। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না। জেএসসিতে গণিতে ৮০ পেলাম না। পেলাম ৭৮। মন খুব খারাপ হলো। তবু আমি গণিত ভালোবাসি। ভালোবেসে অন্যদের অংক শেখাই। নিজেরও চর্চা হয়। একদিন আমিও আমার লক্ষ্যে পৌঁছাব নিশ্চয়।