মার মুখে শুনেছি তারা নাকি ছোটবেলা থেকেই কাজ করছেন। পেটের ভাত জোটাতেই তারা হিমশিম খেতেন। তাই আর লেখাপড়াটা হয়নি।
বিয়ের পরও দুই তিন দিন ভাত না খেয়ে কেটেছে বাল্যবিয়ের শিকার হওয়া আমার মায়ের। সচ্ছলতা আনতে জীবনের হতাশা লগ্নে পঞ্চগড় থেকে পাড়ি জমান ঢাকার দিকে।
এরই মধ্যে জন্ম নেয় আমার দু বোন। জীবনযুদ্ধে আরও দুজন যোদ্ধা যোগ হয়। এই দুই সৈনিকের হাতে বই খাতার বদলে জোটে অন্যের বাড়ির থালা বাসন ধোয়ার কাজ। গৃহকর্মীর যে কি কষ্ট তা আমার বোনদের কাছ থেকে না দেখলে হয়তো কোনদিন টের পেতাম না। অভাবেই তাদের বিয়ে দিয়ে বিদেয় করা হয়।
আর সারা জীবন যুদ্ধ করতে করতে মা বাবাও এখন ক্লান্ত। এখনও হয়নি নিজেদের বাড়ি ঘর। বোনদের বিয়ের যৌতুক আর মায়ের বড় অসুখের জন্য আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি আমার পরিবার।
ছোট থেকেই আমি অভাব দেখে বড় হয়েছি। অনেক কিছু মেনে নিতে শিখেছি। তাই এই যুদ্ধে লড়াই করবার সময়ও হয়ে গেছে আমার।
জীবনের কিছু স্বপ্ন ছিল। ভেবেছিলাম পড়ালেখা করে অনেক বড় হব, মানুষের পাশে দাঁড়াবো, তাদের কষ্টের কথাগুলো আমার কলমে লিখব। কিন্তু সে আর হচ্ছে না বোধহয়। অসচ্ছলতা আর এসএসসিতে ভালো ফল না করায় আমার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে।
যে বিষয়ে ভালো পরীক্ষা দিয়েছি সেই বিষয়গুলোই খারাপ হয়েছে। আমার পরীক্ষার রেজাল্ট কাউকে খুশি করতে পারেনি। এমন কি আমাকেও না।
ইচ্ছা ছিল বাবা মিষ্টি আনবে, মা বিলাবে আর আমি দেখব। কিন্তু রেজাল্টের পর মিষ্টি খাওয়াই ভুলে গেছি। কারো সামনে মাথা তুলে রেজাল্ট বলতেও লজ্জা লাগে। নিজের স্বপ্নগুলো মূল্যহীন হয়ে গেছে।
পরীক্ষার পর এক দোকানে বিক্রয় কর্মী হিসাবে যোগ দিয়েছি। সকাল নয়টায় দোকান খুলি আর রাত দশটায় বন্ধ করি। সারাদিনের ব্যস্ততার মাঝে বড় হবার স্বপ্নগুলো আস্তে আস্তে গুলিয়ে ফেলছি।