লেখাপড়া মানেই এখন জিপিএ পাঁচ পেতে হবে। এজন্য শিশুদের রাখা হয় চাপের উপর। যেন জিপিএ পাঁচ উৎপাদনের যন্ত্র আমরা।
অভিভাবকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখে দেশটাকে নিয়ে আঁতকে উঠি। সন্তানকে জিপিএ পাঁচ পাওয়ানোর জন্য অনেক অভিভাবককে অসৎ উপায় অবলম্বন করতে দেখি। এতে করে সন্তানকে তারা কী বার্তা দিচ্ছেন এটা নিয়ে একটুও ভাবেন না।
কিছুদিন আগে এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালে উত্তরার ট্রাস্ট কলেজের এক ছাত্রী জিপিএ পাঁচ নিয়ে হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছে বলে সংবাদ মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি।
শিশু কিশোররা পারিবারিক চাপেই এ ধরণের হতাশায় ভোগে বলে আমার ধারণা। বাবা-মায়েরা নিজেদের অপূর্ণতাকে সন্তানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে চান। সন্তানের কাছে বড় রকমের করে বসেন।
বাবা-মায়েরা আমাদের খারাপ চান না। আমাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা থেকেই তারা এমনটা করেন। কিন্তু না বুঝে তারা অনেক কিছু করে ফেলেন।
অনেকে প্যারেন্টিং না শিখেই হয়ে যান বাবা-মা। তাই সন্তানের সঙ্গে তাদের হয়ে উঠে না বন্ধুত্ব। ভয় আর বিরক্তির মধ্যেই এগিয়ে যায় সম্পর্ক। তৈরি করে হতাশা। তবে আমার পরিবার এ ক্ষেত্রে বেশ আলাদা। তারা প্রত্যাশা করেন আমি যেন সুশিক্ষিত হই। জিপিএ পাঁচ নিয়ে আমার উপর কোনো ধরণের জুলুম করেন না।
কিছুদিন আগে আমার পরীক্ষার সময় বাবা সাবধান করে দিয়ে বলেন, কোনো ধরণের অসদ উপায় যেন না নেই। তাতে পরীক্ষা যেমনই হোক বাবা সন্তুষ্ট থাকবেন।
যেহেতু আমার উপর জিপিএ পাঁচ পাওয়ার কোনো চাপ ছিল না সেহেতু বেশ ঠাণ্ডা মস্তিষ্কে আমি পরীক্ষাগুলো দিয়েছি। সবগুলো পরীক্ষাই আমার ভালো হয়েছে। আমাদের সমাজের সকলেরই বোঝা উচিত জিপিএ পাঁচ একটি স্বীকৃতি মাত্র। এটি পাওয়া ভালো তবে এরজন্য মরিয়া হয়ে অসৎ হয়ে উঠা অবশ্যই মন্দ কাজ।
জিপিএ পাঁচ পাওয়া মানেই ছাত্রটি মেধাবী এবং বাকিরা অমেধাবী তা কিন্তু নয়। জিপিএ পাঁচ যেমন দরকার আছে তেমনি স্বশিক্ষাও দরকার আছে। তবে জিপিএ পাঁচ তার উপরে নয় এবং আমরাও জিপিএ পাঁচ উৎপাদনকারী নই।