পরীক্ষার আগে অনেক কিছুই ভেবে রেখেছিলাম। এক্সাম শেষ হলেই এএএইইই...সব করবো। কিন্তু দুঃখের বিষয় মানুষ যা চায় তা তার মনের মতো হয়ে ওঠে না। আমার বেলায় তা কিন্তু পুরোপুরি ঠিক।
সে যাই হোক, আমি দেশের মোটামুটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চল চরফ্যাশন থেকে ঢাকায় আসলাম। কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে, নতুন একটা জীবন শুরু করলাম। কিন্তু এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে আমার আগের জীবনটাই বোধহয় ভালো ছিল।
সেখানে যত কষ্টই থাকুক না কেন একাকিত্ব ছিল না কখনো। এখনও মনে পড়ে স্কুল শেষ করে প্রখর রোদে কিংবা ঝড়ো বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফেরা, দুপুরে ক্লান্তির মধ্যে ভাত খেয়েই প্রাইভেটে যাওয়া। আর বিকেল বেলায় বন্ধুদের সাথে নদীর পাড়ে ঘোরোঘুরি কিংবা কর্দমাক্ত মাঠে ফুটবল খেলা, সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে ফ্রেস হয়েই পড়তে বসা, রাতে খাবার পর পড়ার টেবিলে বসে কোনোমতে জেগে থাকার চেষ্টা করা - দিনগুলো কেটে যেত এভাবেই। আর এখন হঠাৎ করেই সব কিছু কেমন যেন পালটে গেল! ফ্ল্যাটের চার দেয়ালের মধ্যে সারাদিন থাকা। নেই কোনো স্নিগ্ধ বাতাস অথবা মাটির ভেজা গন্ধ। সময় কাটাবার জন্যে কিছু বই, ইংরেজি পড়া আর নিজের ক্লাসের বইগুলো পড়া।
আমার জন্যে একটা ভালো দিক হচ্ছে নভেল পড়ে খুব ভালো সময় কাটাতে পারি। একাকিত্বের ভাবনা হতে মুক্তি পাই। সত্যিই বইয়ের চেয়ে ভালো বিনোদন দেবার মতো অন্য কোনো মাধ্যম নেই। বই আমাদের শেখায় নিজেকে চিনতে আর চিন্তাজগতের গভীরে বিচরণ করতে, সামনে নিয়ে আসে বাস্তবতা।
আর সবচেয়ে বড় উপকারি দিক হলো ফেইসবুক কিংবা ফলশুন্য বিনোদনের হাত থেকে বই আমাকে আগলে রাখে ঠিক নিজের সন্তানের মতোই।
আর তাই নর্মান মেলর এর মত আমিও বলব, "আমি চাই যে বই পাঠ্যরত অবস্থায় যেন আমার মৃত্যু হয়।"
যেহেতু পৃথিবীর বহমান, নিজের মতোই বয়ে চলবে, প্রতিনিয়ত পাল্টাবে তার চিরচেনা রুপ। আর মানুষকে এই নতুন পরিবেশে, নতুন ভাবেই টিকে থাকতে হবে। কাজেই আমাকেও টিকে থাকতে হবে নতুন এই শহরে, অর্জন করতে হবে মাথা উঁচু করে বাঁচার সামর্থ। কেননা, প্রগতিশীল এই বিশ্বে দুর্বলের কোনো স্থান নেই।