জন্ম কি শুধু বুয়েট বা মেডিকেলের জন্য?

আমার যখন জন্ম হয় তখন এ পৃথিবীর কিছুই তো জানতাম না। পরিবার আমাকে শেখাতে শুরু করে কোনটা ভালো এবং কোনটা খারাপ।
জন্ম কি শুধু বুয়েট বা মেডিকেলের জন্য?

সাদা কাগজের ওপর কলমের কালো কালির মতো সেসব উপদেশ, আদেশ, বিধান আমার মনে গেঁথে যায়। নিজেকে বড় হতে দেখি আয়নার সামনে। বুঝতে পারিনি হাত-পা শক্তিশালী হচ্ছে, তবে মনের উন্নতি হচ্ছে না। এক ধরণের অজানা পরাধীনতায় আমি ছিলাম।

এরই মধ্যে আমাকে স্কুলের ভর্তির তোরজোড় শুরু হয়। এক্ষেত্রে আমি আমার ছোটবেলা থেকে শেখানো পরিবারের রীতিনীতি অনুসারে চলতে থাকি। তবে এর সময়কাল বেশিদিন টেকসই হয়নি।

হঠাৎ করে সমাজ যেমন চোখের সামনে সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতার মতো বদলাতে থাকে, তেমনি আমাকে নিয়ে বাড়তে থাকে আমার পরিবারের আশা। আমি কেমন যেন হয়ে যাই। কিছু বলতে পারি না, কারণ পরিস্থিত আমায় হতভম্ব করতে থাকে। মনে হতে থাকে আমার জীবনের উদ্দেশ্য কি থাকা উচিত নাকি সেটিও খসড়াস্বরূপ পরিবারের অথবা সমাজের বিধান হিসেবে গণ্য হবে?

শুধু একটা জিনিস আমার মাথায় ঘোরে তা হলো জন্ম আমার শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য, আর এটাই বিত্তশালী হওয়ার চাবিকাঠি। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় আমরা পড়ি জ্ঞানের জন্য না অর্থের জন্য।

বর্তমানে সমাজে দুটি পেশা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৌশলী ও চিকিৎসক। এ দুটি পেশা ছাড়া আমাদের অভিভাবকরা অন্য কিছুকে পেশাই মনে করেন না।

গণিত বইয়ের নিয়ম থেকেও আমাকে বেশি বোঝানো হয় বুয়েট এবং মেডিকেলে ভর্তি হতে না পারলে শান্তি নাই, সুখ নাই, পড়া নাই, টাকা নাই। অবশ্য নিজেদের দোষ ঢাকার জন্য সব কথার শেষে উনারা বলেন, ‘যদি এসব জায়গায় ভর্তি হতে নাও পারো, তবে মনে করো না যে তোমার জীবন শেষ। অনেকে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করেও ভালো কিছু করে।’ এটা যখন বলে তখন আমি তাদের দীর্ঘশ্বাস ঠিক টের পাই।

শুধু ভালো কোথাও পড়ার সুযোগ পেলেই যে হবে তা নয় আমাকে বলে দেওয়া হয়েছে আমাকে অবশ্যই রাজধানীর মধ্যে থাকতে হবে।

এসব বিধান যথেষ্ট বড় রকমের একটা ধাঁধায় ফেলে দেয় আমাকে। হতাশা আমায় দেখে হাসে, খিলখিল করে হাসে যেমনটা আমি হয়ত ছোটবেলায় হাসতাম! এখনও হাসি পায়, তবে তা মনে হয় সিনেমার হাসি, অভিনয়ের হাসি।

ছোটবেলায় সামাজিকীকরণের উদ্দেশ্যেই হয়তো আমাকে ছোটবেলায় একসময় পুতুল নাচ দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তখন তাদের নাচ আমায় মুগ্ধ করেছিল। আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম তাদের মুখের হাসি দেখে। আজ আমি নিজেকে পুতুল নাচের একজন মনে করি। বর্তমান সময়কাল আমায় বুঝিয়ে দিয়েছে তাদের হাসি ছিল কৃত্রিম, যেমনটা আমার এই মুহূর্তে। তবে আমি আজও জানি পুতুলের প্রাণ থাকে না। আমারও কি তাই হলো? হয়তো আগাম বার্তা!

আমার দেহ এখনও চলাফেরা করতে পারে। তাই আমার স্বপ্ন দেখার দিন এখনও বাকি। আমার জীবন, আমার স্বপ্ন। আমার কর্ম, আমার ফল। আমি শ্রদ্ধা করি আমার পরিবারকে, সমাজকে। তবে তাদের সে সকল সিদ্ধান্তগুলোকে নয় যেগুলো কিনা আমায় হতাশ করবে, যার কারণে আমার মনুষ্যত্ব লাশ হবে।

সময় এসেছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। মরিচা পড়া শরীরকে জাগ্রত করে সময় এসেছে একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com