গণমাধ্যমে যখন শিশু তামাররা ও অনিরুদ্ধের খবর দেখছিলাম তখন মনে হচ্ছিল এরচেয়ে নির্মম আর কী হতে পারে। এটাই হয়তো পৃথিবীর একমাত্র জিনিস যা সবচেয়ে নির্মম।
ঝরে গেল দুটি সম্ভাবনা। কে জানতো এই অনিরুদ্ধ বা তামাররাই হয়তো একদিন পাইলট হতো, চোখে স্বপ্ন নিয়ে উড়ত আকাশে।কিন্তু হারিয়ে গেল দুটি ভবিষ্যৎ।
পুরো নাম তামাররা প্রিয়ক। গাজীপুরের শ্রীপুরে বাবা মায়ের সঙ্গে থাকত ও। ফেইসবুকে তার এক আত্মীয়র পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম তামাররা আধোবোলে কয়েকদিন ধরে সবাইকে বলে বেড়াচ্ছিল, ‘আমি আকাশে উড়বো, প্লেনে চড়ব।’
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস উড়োজাহাজে ঠিকই উঠেছিল সে কিন্তু আর ফেরা হয়নি। এটাই ছিল তামাররার শেষ ও প্রথম উড়োজাহাজে চড়া।
বাবা মায়ের সঙ্গে এই ভ্রমণে গেলেও শুধু বাবাকে নিয়ে সে পরপারে পাড়ি দিয়েছে। মা আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সাত বছর বয়সী অনিরুদ্ধও সবাইকে বাকরুদ্ধ করে চলে গেছে। ধানমণ্ডিতে অরণী বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত সে। চাকরিজীবী ব্যস্ত বাবা মা বিয়ের আট বছর পর সপরিবারে দেশের বাইরে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। কে জানত সপরিবারেই হারিয়ে যাবেন চিরতরে!
এরা দুজন ছাড়াও সেদিনের দুর্ঘটনায় ঝরে গেছে আরও অনেক সম্ভাবনা। সিলেটের জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজে পড়ুয়া নেপালের ১৩ মেডিকেল শিক্ষার্থীও এই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। শেষ বর্ষের পরীক্ষা শেষে নিজ দেশে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে যাচ্ছিলেন তারা। কিছুদিন পরেই ইন্টার্ন করে পেশাজীবনে পা রাখার কথা ছিল এই শিক্ষার্থীদের। কিন্তু একসঙ্গে তেরোটা প্রদীপ নিভে গেল।
হিমালয় কন্যার দেশ নেপালে গিয়ে সুখ স্মৃতি ফ্রেমবন্দী করে মানুষ। আর আমরা পেয়েছি শোকস্মৃতি। পুরো বাংলাদেশ আজ মর্মাহত। সিঙ্গাপুর সফর সংক্ষিপ্ত করে ফিরে এসেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। এই ঘটনায় শোক জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকোব, দেশটির প্রধানমন্ত্রী লী সেইন লুং এবং কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের থেকেও শোক জানানো হয়েছে।
তাদের স্মরণে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
১২ মার্চ দুপুরে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ইউএস বাংলার ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ মডেলের ওই উড়োজাহাজটি ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়। ফ্লাইট বিএস-২১১ এর ৭১ জন আরোহীর মধ্যে ৩৬ জন বাংলাদেশি ছিলেন। এর মধ্যে চারজন ক্রু এবং ২২ যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে আছেন দশজন।