হায় পরীক্ষা! হায় শিক্ষা!

হায় পরীক্ষা! হায় শিক্ষা!

বিশ্বের অনেক দেশেই শিক্ষা এমন একটি মাত্রা অর্জন করেছে, তারা শিক্ষিত হয়ে ওঠে। আর আমাদের? আমাদের গিলতে আর ওগরাতে হয় সিলেবাস নামের গাদাগাদা অপাঠ্য!

এতে না শিক্ষিত হচ্ছি, না থাকছি মূর্খ হয়ে! কারণ আমরা পঞ্চম শ্রেণি থেকেই পাবলিক পরীক্ষা পাশ করছি আর সনদ পেয়ে যাচ্ছি শিক্ষিত হিসেবে। এ যেন এক ভজকট অবস্থা!  

পরীক্ষার নামে মানসিক ও শিক্ষিত হওয়ার অত্যাচার আমাদের শৈশব থেকেই শুরু হয়। আমার ধারণা, দেশের সম্মানিত শিক্ষাবিদরা কোনো পরিকল্পনা করেন না। তারা এখনও আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে হাতেকলমে নানা রকম পরিকল্পনার মহড়া দিয়ে চলেছেন।  

দেশের শিক্ষামন্ত্রী হ্যালোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তার শৈশব নাকি অনেক সুন্দর ছিল। তিনি আমাদের মত বন্দি জীবন কাটাতেন না। খেলাধুলা করতে পারতেন প্রাণ ভরে।

কিন্তু আমরা শুরু থেকেই পাঠ্যবই বন্দি। তিনি তার পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় আমাদের প্রাণভরে খেলাধুলা করার শৈশব দিতে পারেননি। এটি হয়ত তার একার নয়, সামগ্রিক ব্যবস্থার ত্রুটি।   

আমার অতীত দিনের কথা বলি। এক পড়ন্ত বিকেলে মাঠে খেলছিলাম। আমার মা চিন্তিত চেহারা নিয়ে অফিস থেকেই ফিরেই বাসায় টানতে টানতে নিয়ে গেলেন।

তার চিন্তার কারণ পঞ্চম শ্রেণি থেকেই বোর্ড পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর আমি সেই হতভাগাদের একজন, যারা এই পরীক্ষামূলক পরীক্ষার প্রথম ব্যাচ।

সেদিন থেকে শুরু হল পড়ার চাপ আর খেলাধুলা বা অন্য সব আনন্দের উপকরণ গেলো নির্বাসনে। সে সময়  আমার মত হাজার হাজার শিশুর জীবনের স্বাভাবিক চিত্র ছিল এটি।

এখানেই শেষ নয়। যেহেতু আমরা প্রথম ব্যাচ তাই কেউই জানত না, প্রশ্ন কেমন হবে। শুরু হল কোচিং নামের উত্তরণের সিঁড়ি ভাঙার যুদ্ধ।

পরীক্ষার চিন্তায় আমি ঘুমাতেই পারতাম না। আমরা ছোট, তাই বড়দের কোনো সিদ্ধান্ত ভালো না লাগলেও আমাদের মেনে নিতে হয়।

একে একে সমাপনী দিলাম, জেএসসি দিলাম। শুরু হল এসএসসি-র প্রস্তুতি।  

প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা শিক্ষকের কাছে যেতে হয়। তারপরেও কথা আছে। নিজের স্কুলের শিক্ষকের কাছে না পড়লে পরীক্ষায় অনেক শিক্ষকই নম্বর কম দেন। সেই পড়া পড়ে এসে ক্লান্ত শরীর নিয়ে আবার পড়তে বসতে হয়। দু:শ্চিন্তা করতে হয়। সৃজনশীল উত্তর দিয়ে সৃজনশীল হয়ে বেড়ে ওঠার দু:শ্চিন্তা। সৃজনশীলতার সাথে দু:শ্চিন্তার কোনো যোগসূত্র আছে কিনা আমার জানা নাই। আপনাদের জানা আছে?

তবু যারা দিনরাত কষ্ট করে এক শিক্ষকের বাসা থেকে আরেক শিক্ষকের বাসায় না খেয়ে দৌড়ায়, প্রাণান্ত চেষ্টা করে, নিরলসভাবে পড়ে; তারা যখন দিনশেষে দেখে, ফাঁস হওয়া প্রশ্ন নিয়ে এলেবেলেরাও মেধা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে, মনটা ভেঙে যায় শিক্ষাপদ্ধতির, প্রশাসনের অসারতায়!  

শিক্ষক এবং  অভিভাবকরা বলেন, আগের কথা না ভেবে পরের বারের জন্য তৈরি হতে। একই অবস্থা এইচএসসি পরীক্ষাতেও। এরপরে ভর্তি পরীক্ষা! হায়, সেখানেও যদি নির্বিঘ্নে ভর্তি হওয়া যেত!

Related Stories

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com