ব্যর্থতা ও সফলতার গল্প
হঠাৎ একদিন এক সহপাঠীর কাছ থেকে হ্যালোর শিশু সাংবাদিক প্রশিক্ষণের খবরটি পাই। সে সময় পড়াশোনার বাড়তি চাপের কারণে যোগাযোগ করতে পারিনি।
যখন যোগাযোগ হলো, তখন একটু দেরিই হয়ে গেছে। প্রশিক্ষণ কর্তৃপক্ষ জানালেন, আগ্রহী আবেদনকারীদের তালিকা চূড়ান্ত। যদি কোনো সুযোগ থাকে, মানে কেউ যদি অনুপস্থিত থাকে, জানাবেন।
আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমার ভাগ্যে শিকা ছিঁড়ল। শেষ সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাই। এটি ছিল আমার জীবনে সাংবাদিকতার প্রথম কোনো প্রশিক্ষণ।
আমাদের ভাবনা, খবর, ভালো-মন্দলাগা, অন্যায়, প্রতিবাদ, নানা বিষয় মানুষের সামনে তুলে ধরার কাজে প্রেরণা পেয়েছি এখান থেকেই।
প্রশিক্ষণে সর্বোচ্চ পারদর্শিতা প্রদর্শনের জন্য ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহমেদ তার লেখা একটি বইও পুরস্কার হিসেবে আমাকে দেন।
প্রশিক্ষণের পর ঠাকুরগাঁওয়ের শিশুপার্ক নিয়ে একটি সংবাদ তৈরি করেছিলাম। কিন্তু ঘটনাচক্রে সেখানে আমি নেপথ্যেই রয়ে গেছি। তাই প্রথমেই ব্যর্থতার সাথে আলিঙ্গন।
তারপরেও থেমে যাইনি। সে সময় বারবার ভেবেছি, মাঠ পর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতাটি জীবনে অবশ্যই কাজে লাগবে। প্রতিদিন হ্যালোর সাইটটি ঘুরে ঘুরে খবরগুলো পড়তাম। আমার মতো শিশুরাই যে এতো ভালো কাজ করে তা দেখে খুব খুশি এবং অনুপ্রাণিত হতাম।
এরপর থেকেই কোনো বিষয় মাথায় আসার সাথে সাথে হ্যালোর আপুদের ফোন করে, কীভাবে সংবাদটিকে আরো ভালো করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ নিতে শুরু করি।
কিন্তু প্রায় সময়ই আমি ডিভাইস সমস্যা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। নিজের মধ্যে এক ধরনের লজ্জাবোধ কাজ করতো। অন্যদের এত ভালো ভালো কাজের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে, নিজের কাজের মান নগণ্য মনে হতো। প্রশিক্ষক বারবার বোঝানোর পরেও নিজের মাঝে কিছু একটার অনুপস্থিতি অনুভব করতাম।
সম্প্রতি হ্যালোর সাংবাদিক পৃথা প্রণোদনা ও শেখ নাসিরের নেপাল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে ৩৯ মিনিটের ভিডিওটি মনোযোগ দিয়ে দেখলাম। ভিডিওর শেষে যখন শরফুদ্দিন ভাইয়া বললেন, "আমিও আমার মোবাইল ফোন দিয়ে কাজ করি", এটা শুনে নিজের মধ্যেও একটু আশার আলো খুঁজে পেতে শুরু করি। আমার মতো অনেকেই নিজের মোবাইল ফোন দিয়ে কাজ করে শোনার পর নিজেকে আর দুর্বল মনে হচ্ছে না। আজকেও আমার মোবাইল ফোন দিয়ে একটি সংবাদের ভিডিও ধারণ করেছি।
হ্যালো আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে ব্যর্থতাকে শক্তিতে পরিণত করা যায়।