বাবা-মা বন্ধু হতো যদি

রোববার ছিল বিশ্ব বন্ধু দিবস। বিশ্বব্যাপী এ দিনটি নিয়ে তোড়জোড় হয়ে গেল। আর আমি এসব দেখে শুনে ভাবছিলাম, সব বাবা-মা যদি ছেলে-মেয়ের বন্ধু হতে পারতেন তাহলে কতই না ভালো হতো।

দুঃখের বিষয়, অনেক বাবা-মা এ ব্যাপারে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। সন্তানের খাওয়া ও প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার ফলাফল ছাড়া তারা আর তেমন কিছু ভাবেন না।

জন্মের পরপরই আমাদের শিক্ষা শুরু হয়ে যায়। এই শিক্ষাগুলো হচ্ছে, নৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক শিক্ষা। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া আমরা বাকি দুটো পেয়ে থাকি আমাদের পরিবার থেকেই।

আমরা সন্তান হিসেবে এই শিক্ষার হাতেখড়ি অর্জন করি বাবা-মার কাছে কিন্তু অনেক পরিবারেই বাবা-মার ব্যস্ততা, সন্তান পালনের ব্যাপারে জানাশোনার অভাব, অবহেলা ও অসচেতনতার ফলে অনেক ছেলে-মেয়েই ভুল পথে পা বাড়ায়। এসব সন্তানেরা বাবা-মায়ের চোখের আড়ালে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কাজ ও সহিংস গোষ্ঠীর জালে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে।       

কিন্তু শুরু থেকেই যদি এসব ভুল ও বিপজ্জনক পথ সম্পর্কে সন্তানের সাথে খোলামেলা আলোচনা করা হয়, তাহলে হয়তো বিপদ খানিকটা হলেও এড়ানো সম্ভব।

উচ্চমাধ্যমিকের পরেই অনেক ছেলে-মেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য নিজের পরিবার ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় বা বড় পরিসরে মেলামেশার সুযোগ পায়। পরিবারে কড়া শাসনের বাইরে এই অবাধ স্বাধীনতা পেয়ে তার যথার্থ ব্যবহার করতে না পেরে অনেকেই হয়ে ওঠে স্বেচ্ছাচারী। 

শুধু শাসন না করে বাবা-মা যদি বন্ধুর মতো ছেলেমেয়ের সাথে মিশতে পারতেন বা সঠিক কাউন্সেলিং করতে পারতেন তাহলে তারা এরকম বিগড়ে যেত না বলেই আমি সমাজ মনোবিদদের নানা ধরণের পরামর্শ পড়ে বুঝতে পারি।   

আমিও আমার মা-বাবাকে ছেড়ে নেত্রকোণার এক গ্রাম থেকে ময়মনসিংহে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছি। তবে আসার আগে তারা আমাকে পাশে বসিয়ে বন্ধুর মতো বুঝিয়েছেন, কীভাবে আমার চলাফেরা ও পড়ালেখা করা উচিৎ আর কার সঙ্গে মেলামেশা করা উচিৎ নয়।

মাদক ও মাদকাসক্তের কাছ থেকে দূরে থাকার কথা বলেছেন। বর্তমানে জঙ্গিবাদের খবরেও তারা উদ্বিগ্ন। সে ব্যাপারে আমাকে সচেতন করেছেন।   

তারা আমাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। কিন্তু ছেলেবেলা থেকে আমাকে তারা শিখিয়েছেন, কীভাবে স্বাধীনতার ব্যবহার করতে হয়। সে কারণেই তাদের কাছে কোনোকিছু গোপন করতে হয়নি। 

তাই আমার মনে হয়, শুধু শাসন নয়, শুধু পড়ালেখার খোঁজ নয়, সন্তানের সবকিছুতেই বাবা-মার সম্পৃক্ততা খুব জরুরি। বন্ধু হয়ে উঠতে হবে। পুরস্কারের ঘুষ নয়, সময় দিতে হবে। নাহলে, সন্তান কাছে থাকা অবস্থায় বাবা-মাকে ভয় পাবে আর দূরে গেলেই তাদের অবাধ্য হয়ে উঠবে। ঘটবে নানা বিপত্তি। তখন বাবা-মার অনুতাপ করা ছাড়া আর করার কিছু থাকবে না।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com