আনন্দেই কাটল আমাদের ঈদ

“আব্বু, দুলাভাই, বড় বোন, কাজিন সবার কাছ থেকে মিলিয়ে ৫০০ টাকা সালামি পেয়েছি এবার।”
আনন্দেই কাটল আমাদের ঈদ

এবারের ঈদটা অন্যবারের তুলনায় একটু অন্যরকম কেটেছে। রোজা শুরু হওয়ার পর থেকেই কেনাকাটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

নতুন পোশাক কেনার এই অপেক্ষার অবসান হলো পহেলা বৈশাখের দিন। সেদিন আমরা বাসার সবাই মিলে মার্কেটে যাই।

কেনাকাটার পরই শুরু হলো আরেক অপেক্ষা- কবে বাড়ি যাব। আমাদের গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদে। সেখানেই প্রতি বছর ঈদ করা হয়।

আব্বুর চাকরির জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় থেকেছি আমরা। তবে কয়েক মাস হলো আমরা ঢাকায় থাকছি। শহুরে জীবনকে বরাবরই আমার বিষাদময় মনে হয়। এজন্য রাজধানী ঢাকার জীবনযাপন আমার কাছে অনেকটাই বিরক্তির কারণ। তাই বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছাটা এবার বেশি করে পেছন থেকে তাড়া করছিল।      

অবশেষে ঈদের আগের বুধবার আমি, আব্বু, আম্মু, আমার বড় ও ছোট বোন সবাই মিলে আমরা কাওরাইদ আসি। স্বজন, বন্ধু, প্রতিবেশি সবার সঙ্গে দেখা হয়ে মনটা মুহূর্তেই ভালো হয়ে গেল।

এর একদিন পরই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসে, অর্থাৎ চাঁদরাত। শুক্রবার সন্ধ্যায় জানতে পারি বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা গেছে, শনিবার ঈদ উদযাপিত হবে।  

এরপরই আমরা স্পিকারে বাজাই কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’ গানটি। যে গান বাঙালি মুসলমানের ঈদ উদযাপনের আবশ্যকীয় অংশ। এই গান ছাড়া যেন ঈদের আমজেই আসে না!

এরপর আমরা তারাবাতি ও ছোট এক ধরনের পটকা ফাটিয়ে আনন্দ করি। চাঁদ রাতের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো মেহেদি দেওয়া। আমার বড় বোন প্রান্তি আমাকে আর ছোট বোন ঈশা মণি সহ আরো বেশ কয়েকজন প্রতিবেশিকে মেহেদি দিয়ে দেয়। রাতে খাওয়া দাওয়া ও ঈদের দিনের পরিকল্পনার শেষ করে ঘুমাতে যাই।

সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাই। এরপর গোসল শেষ করে আমরা সেমাই, নানা ধরনের পিঠা ও খিচুড়ি দিয়ে সকালের নাস্তা করি। খাওয়া শেষ করে নতুন পাঞ্জাবি পরে বন্ধুদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলি, কে কী করবে তাদের পরিকল্পনাগুলো শুনি।

এরপরই আসে ঈদের মূল আকর্ষণ অর্থাৎ সালামি পর্ব। ঈদের জামাতে যাওয়ার আগেই সালামি সংগ্রহ করি। আব্বু, দুলাভাই, বড় বোন, কাজিন সবার কাছ থেকে মিলিয়ে ৫০০ টাকা সালামি পেয়েছি এবার।

ঈদের জামাত শেষে আমরা কোলাকুলি করি ও স্মৃতি রাখার জন্য ক্যামেরার ফ্রেমে আবদ্ধ হই। বাড়ি ফিরেও কতক্ষণ ছবি তোলার পর্বই চলেছে। দুপুরের ভূরিভোজ শেষ করে আমরা বিশ্রাম নেই।

এরপর সন্ধ্যায় সবাই মিলে বাড়ির কাছেরই একটি রেস্তোরাঁয় যাই। আমাদের গ্রামে এটিই প্রথম নদীর পাড়ে কোনো খোলামেলা রেস্তারাঁ। সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া ও ছবি তোলার পর আমরা বাড়ি ফিরে আসি। আমাদের এই আনন্দযজ্ঞে আমার চাচাত ভাইকে অনেক মিস করেছি। সব মিলিয়ে বেশ উপভোগ্য ছিল আমাদের ঈদ উদযাপন।

প্রতিবেদকের বয়স: ১৩। জেলা: ঢাকা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com