সন্তান প্রসব নিরাপদ হোক

রাজিয়া যদি হাসপাতালে সন্তান প্রসব করতেন, তাহলে রক্তক্ষরণ বন্ধে চিকিৎসকরা হয়ত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ পেতেন। হয়ত রাজিয়া বেঁচেও যেতেন।
সন্তান প্রসব নিরাপদ হোক

প্রতিনিধিত্বশীল ছবি

কয়েক দিন আগে টেলিভিশনে এক অনাকাঙ্ক্ষিত খবর দেখতে পাই। মাত্র ২৫ বছর বয়সে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে জটিলতায় মারা যান সাফ জয়ী নারী ফুটবলার রাজিয়া খাতুন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, রাজিয়াকে সন্তান প্রসবের জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। তিনি সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন বাড়িতেই। রাজিয়ার মতো একজন নারী যিনি আরও অনেক স্বাধীনচেতা নারীর রোল মডেল ছিলেন, তার এমন পরিণতি মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর।

আধুনিকতার এই যুগে যেখানে মানুষ সন্তান গর্ভে আসার পর থেকেই পুরোটা সময় কোনো না কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে বা হাসপাতালে নিয়মিত চেক-আপ করান, সেখানে বাড়িতে সন্তান প্রসবের ঘটনা শুনে একটু অবাক হতেই হয়।

যদিও বাংলাদেশের হতদরিদ্র এবং কুসংস্কারচ্ছন পরিবারগুলোতে এখনো এমন ঘটনা ঘটে।

এক সময় যখন হাসপাতালের সংকট ছিল,তখন বাড়িতেই সন্তান প্রসবের ঘটনা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশের প্রতিটি প্রান্তেই হাসপাতাল,কমিউনিটি ক্লিনিকের মতো স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে।

শহর অঞ্চলের দিকে গেলে কয়েকটা ভবন পর পরই নজরে পড়ে সরকারি-বেসরকারি নানা হাসপাতাল। তবুও এখনো অনেক পরিবার আছে যারা মনে করে, মেয়েদের হাসপাতালে সন্তান প্রসব করা উচিত নয়। কেউ এটাকে অর্থের অপচয় বলেও মনে করে। আবার কেউ কেউ তো মেয়েকে কেন পুরুষ চিকিৎসক স্পর্শ করবে,এমন প্রশ্নও করে বসেন।

অনেকে উদাহরণ টেনে বলেন, “আমাদের কি বাড়িতে বাচ্চাকাচ্চা হয়নি? এখন কেন হাসপাতালে যেতে হবে?”

আমি মনে করি, এই প্রশ্নেরও একটি স্পষ্ট জবাব আছে, হাসপাতাল তৈরি করাই হচ্ছে মানুষের কল্যাণের জন্য। এই যে আমাদের সভ্যতা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে, এর মূল কারণই কিন্তু মানুষের জীবনকে সহজ করা।

আমি মনে করি, হাসপাতালে সন্তান প্রসব শুধু প্রসবের সময়ের নিরাপত্তার জন্য নয়। প্রসবের আগে এবং পরেও সন্তান এবং গর্ভবতী মায়েদের অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। হাসপাতালে সন্তান প্রসবের কারণে, এই সমস্যাগুলোর সমাধান অনেক ক্ষেত্রেই সহজে করা যায়।

বিনা চিকিৎসায় রাজিয়ার মৃত্যু আমাদেরকে কি নাড়া দেয় না? বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, রাজিয়া রাত ১০টার দিকে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। ১১টার দিকে তার স্বামীকে জানানোও হয় যে, মা এবং সন্তান দুই জনেই সুস্থ আছে। কিন্তু রাত ৩টার দিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে ভোর ৪টার দিকে মৃত্যু হয় এই নারী ফুটবলারের।

রাজিয়া যদি হাসপাতালে সন্তান প্রসব করতেন, তাহলে রক্তক্ষরণ বন্ধে চিকিৎসকরা হয়ত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ পেতেন। হয়ত রাজিয়া বেঁচেও যেতেন।

শুধু মা নয়, নবজাতকের জন্যও হাসপাতাল জরুরি। আমার নিজের জন্মের কথাই বলি। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে আমার জন্ম হয় জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে। সিজারিয়ান না, নরমাল ডেলিভারি। আমার ওজন অনেক বেশি থাকায়, এতে আমার কিছু সমস্যা দেখা দেয়। জন্মের পর আমাকে আলাদাভাবে অক্সিজেন দিতে হয়েছিল। আমার জন্মটা যদি বাড়িতে হতো, আমি সেই অক্সিজেন কোথায় পেতাম?

এমন অনেক ঘটনা আছে আমাদের আশেপাশে। যদিও বর্তমানে আমাদের দেশে বাড়িতে সন্তান প্রসবের ঘটনা অনেক কমে গেছে,তবুও আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। প্রসবের সময় আর কোনো মা-শিশু যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায় এমনটাই আমার প্রত্যাশা।

প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: ঢাকা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com