প্রাসাদ তৈরিতে দুই হাজার মিস্ত্রি

তাজহাট জমিদার বাড়িটি বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মহারাজা কুমার গোপাল লাল রায় তৈরি করেন। মহারাজা গোপাল রায় ছিলেন হিন্দু এবং পেশায় ছিলেন একজন স্বর্ণকার।

বলা হয়, তার সুন্দর 'তাজ' বা 'মুকুট' এর কারণেই এ এলাকার নাম হয় তাজহাট।

বৃহত্তর রংপুরে যতগুলো প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে তার মধ্যে তাজহাট জমিদার বাড়ি অন্যতম। জমিদার বাড়িটি অনেকের কাছে তাজহাট  রাজবাড়ি নামেও পরিচিত।

প্রাচীন এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি বৃহত্তর রংপুরের লালবাগে অবস্থিত।
বিংশ শতাব্দীতে বৃহত্তর রংপুর শাসন করতেন জমিদার মহারাজা কুমার গোপাল রায়। মহারাজা গোপাল ছিলেন শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী শাসক। তিনি প্রজাদের ভালো-মন্দ বিচার করে সবসময় তাদের পাশে থাকতেন। তার জমিদারিতে কোনো প্রজাই অসন্তুষ্ট হতেন না। তিনি ব্রিটিশদের অনুগত জমিদার হলেও প্রজারা তাকে খুব ভালবাসতেন।

এই শতাব্দীর মাঝামাঝিতে রাজা গোপাল প্রায় দুই হাজার রাজমিস্ত্রিকে দিয়ে এই বাড়িটি তৈরি করেন।

এটি তৈরিতে ব্যয় হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। বাড়িটির চারদিকে রয়েছে  ফুলের বাগান, উত্তর ও দক্ষিণাংশে কামিনী, মেহগনি, কাঁঠাল ও আমবাগান।
লাল ইট, শ্বেত ও চুনা পাথর দিয়ে তৈরি এই বাড়ির তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় রয়েছে রাজা গোপালের ব্যবহৃত নানা জিনিস।
২১০ ফুটের মত প্রশস্ত চারতলা বাড়িটির ভেতরে রয়েছে অসংখ্য কক্ষ, গোসলখানা ও অতিথি শয়নশালা। এর গঠনশৈলী প্রাচীন মোগল স্থাপত্য দেখে তৈরি বলে মনে করা হয়।

এই বাড়ির সিঁড়িগুলো বাংলার অন্য প্রাসাদগুলো থেকে এটাকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে।

সর্বমোট ৩১ টি সিড়ি আছে যার সবটিই ইতালীয় ঘরানার মার্বেল পাথরে তৈরি।
শুধু সিঁড়ি নয় মূল প্রাসাদের মেঝেও এই মার্বেল পাথরেই তৈরি।

১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রাসাদটি ব্যবহৃত হয় রংপুর হাইকোর্ট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একটি শাখা হিসেবে।  ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রাসাদটিকে একটি সংরক্ষিত স্থাপনা তথা স্থাপত্য হিসেবে ঘোষণা করে।

মার্বেলের সিঁড়ি বেয়ে জাদুঘরে উঠলেই রয়েছে বেশ কয়েকটি কক্ষ চোখে পড়ে। যাতে রয়েছে ১০ম ও একবিংশ শতাব্দীর টেরাকোটা শিল্পকর্ম। এখানে রয়েছে সংস্কৃত ও আরবি ভাষায় লেখা বেশ কিছু প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। পেছনের ঘরে রয়েছে বেশ কয়েকটা কালো পাথরের বিষ্ণু মূর্তি।

প্রাসাদের সামনের সুন্দর ফোয়ারাটি সময়ের ভারে কিছুটা মলিন হলেও এখনও এর জৌলুস বোঝা যায়। কথিত আছে রানির জন্যেই এই ফোয়ারাটি তৈরি করা হয়েছিল।

২০০৫ সালের আগে জমিদার বাড়িটি তাজহাট রাজবাড়ি হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। সে বছর সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বাড়িটি জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা দেয়।

এরপর থেকে বাড়িটি তাজহাট জমিদারবাড়ি জাদুঘর হিসেবেই পরিচিত। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী এই বাড়িটি দেখতে আসেন।

এখানে টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। প্রাসাদ চত্ত্বরে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে চাইলে, গাড়ীর জন্যও দিতে হবে নির্দিষ্ট ফি। রংপুরের এই স্থাপনা থেকে সরকারের বার্ষিক আয় হয় প্রায় ২০লাখ টাকা।
জমিদার বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রয়েছে শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

তবে এতো সুন্দর প্রাসাদ ঘুরতে পারলেও তুমি এর ভিতরে ছবি তুলতে পারবে না।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com