বিজ্ঞান চর্চায় অনুসন্ধিৎসু চক্র

প্রায় ঊনচল্লিশ বছর আগের কথা ১৯৭৫ সালের ৬ জুলাই কজন কলেজ পড়ুয়া কিশোর গঠন করে 'অনুসন্ধিৎসু চক্র বিজ্ঞান সংগঠন’। এই তরুণরা নতুন কিছু করার আশায় ঘাটাঘাটি শুরু করে বিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে।

ছেলে-বুড়ো সবার মাঝে বিজ্ঞানকে সহজ-সাবলীলভাবে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ঊনচল্লিশ বছর ধরে কাজর করে দেশের একটি  গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান সংগঠনে পরিণত হয়েছে অনুসন্ধিৎসু চক্র।

প্রতিষ্ঠাতা তরুণরা প্রথম থেকেই ছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানের দারুণ ভক্ত। বলতে গেলে তারাই বাংলাদেশের প্রথম সৌখিন জ্যোতির্বিদ্যা চর্চা শুরু করে।

১৯৮৫ সালের হ্যালির ধূমকেতু পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প ছিল অনুসন্ধিৎসু চক্রের প্রথম বড় আকারের পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প। হ্যালির ধূমকেতু পর্যবেক্ষণ বিশ্বজোড়া সৌখিন পর্যবেক্ষকদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

এই হ্যালির ধুমকেতু ৭৫-৭৬ বছর পর পর দেখা যায়। হ্যালির ধূমকেতু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সাথে রাতের আকাশের পরিচয় ঘটে। পর্যবেক্ষণটির আয়োজন সফল হওয়ায় অনুসন্ধিৎসু চক্রকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি ১৬'' মিড টেলিস্কোপ উপহার দেয়।

১৯৮৫ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখে একটি জ্যোতির্বিদ্যাবিষয়ক মানমন্দির তৈরির পরিকল্পনা করে তারা। এই পথ ধরে তারা এক বছরের মধ্যেই ঢাকার  বিজ্ঞান  জাদুঘরের  ছাদে দেশের প্রথম জ্যোতির্বিদ্যাবিষয়ক পর্যবেক্ষণকেন্দ্র গঠন করে। তবে দুঃখের কথা হল বিভিন্ন কারণে এটি এখন বন্ধ রয়েছে।

১৯৮৯ সালে তারা জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য প্ল্যানেটারিয়ামের একটি ছোটো সংস্করণ গঠন করে যা কয়েক বছর ঢাকার বিজ্ঞান জাদুঘরে চালু ছিল । 

১৯৯৫ সালের ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্বে একটি পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যায়। এটি পর্যবেক্ষণের জন্য তারা  সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্টে পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পের আয়োজন করে। বিজ্ঞানীসহ প্রায় ৩০০ জন এতে অংশ নেন।

এছাড়াও ২০০৩ সালের অগাস্টে ইতিহাসে প্রথম বারের মতো মঙ্গল গ্রহ পৃথিবীর কাছাকাছি আসে চলে আসে।  এ উপলক্ষে অনুসন্ধিৎসু চক্র উৎসবের আয়োজন করে। উৎসবটিতে মঙ্গল গ্রহকে কেন্দ্র করে টেলিস্কোপ পর্যবেক্ষণ, ভিডিও দেখানো, আলোচনা সভা, সেমিনার ইত্যাদি আয়োজন করা হয়। ঢাকা, পঞ্চগড়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহে উৎসবটি আয়োজিত হয়। ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ এতে অংশ নেয়।

২০০৯ সালের ২২শে জুলাই বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও চীন থেকে একটি পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা হয়। বাংলাদেশের পূর্ণগ্রাস গ্রহণ শুধুমাত্র বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম কোণ থেকে দেখা সম্ভব ছিল।  এই অঞ্চলের শহরগুলোর মধ্যে পড়ে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও রংপুর।

ওই গ্রহণ শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ৫৬ মিনিটে। বাংলাদেশে পঞ্চগড়ের কাছে পূর্ণগ্রাসের স্থায়িত্ব ছিল সবচেয়ে বেশি, প্রায় চার মিনিট।  এ উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পের আয়োজন করে এই সংগঠন।

জ্যোতির্বিজ্ঞান ছাড়া অনুসন্ধিৎসু চক্র গণিত, পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, সামাজিকবিজ্ঞান, উড্ডয়নবিদ্যা, বিজ্ঞান সাহিত্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চর্চা করে থাকে।

এই চক্র বাংলাদেশের শিশু-কিশোরের মধ্যে বিজ্ঞান সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছে। প্রায় একশ’ জন শিশুকিশোর নিয়মিত এর বিভিন্ন কাজে অংশ নিয়ে থাকে।

এছাড়াও এরা দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে বিজ্ঞান মেলা, পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প, বিজ্ঞান-বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করে থাকে।

চক্রের কয়েকজন কিশোর নটরডেম কলেজ এ অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জাতীয় বিজ্ঞান মেলায় বিজ্ঞান প্রোজেক্টের জন্য পুরস্কার পেয়েছে।

বিজ্ঞানে উৎসাহী যে কেউ অনুসন্ধিৎসু চক্রের সদস্য হতে পারে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com