বইটি আরিফুল ইসলাম তপু নামে এক কিশোরের নিজের কথা দিয়ে শুরু হয়েছে।
তপুর জন্য ক্রিকেট ব্যাট কিনতে গিয়ে রোড অ্যাকসিডেন্টে মারা যান তপুর বাবা। এ দুর্ঘটনার হাত ধরেই তপুর জীবনে নেমে আসে গাঢ় অন্ধকার। বাবার খুনি হিসেবে তপুকে দোষারোপ করে তার মা। স্বামীর মৃত্যুশোকে তপুর মা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর শুরু হয় তপুর উপর নির্মম অত্যাচার।
মা প্রতিদিন কারণ-অকারণে তার শরীরে হাত তুলতে থাকেন। শুরুতে পরিবারের অন্যরা ব্যাপারটিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও মায়ের মারের হাত থেকে তপুকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। শেষে তপুকে থাকতে দেওয়া কাজের বুয়া দুলি খালার সঙ্গে। রান্না ঘরের ময়লা আবর্জনার মধ্যে শুরু হয় বসবাস।
স্কুলে মেধাবী তপুকে পরীক্ষায় টেনেটুনে পাশ করতেই হিমশিম খেতে হয়। প্রতিদিন মার খাওয়ার দাগ লেগে থাকত শরীরে। সে দাগ নিয়েই ক্লাসে হাজির হতো। ক্লাসের সবাই মনে করে, তপু বখে গেছে। তাই কেউ তার সঙ্গে মিশতে চায় না। সবাই তপুকে ভয় পায়।
একদিন ক্লাসে একটা নতুন মেয়ে আসে। নাম প্রিয়াঙ্কা। খুব গুছিয়ে কথা বলতে জানে ও। পরোপকার করতে ভালোবাসে। মেয়েটার সঙ্গে তপুর পরিচয় হয়। প্রিয়াঙ্কার সংস্পর্শে এসে তার জীবন বদলে যায়। তপুর গণিত ভারি পছন্দ। অঙ্কের জটিল সব সমাধান করে ফেলে মুহূর্তের ভেতর। কিন্তু স্যাররা ভাবেন, তপু কারো খাতা দেখে অঙ্ক করে; সেজন্য প্রতিটি পরীক্ষায় জিরো পায় সে।
তপু আকিষ্কার করল, সে একা। বড্ড একা। তার কোনো বন্ধু নেই। কোনো স্বপ্ন নেই। নিষ্ঠুর এই পৃথিবীতে অযথা বেঁচে আছে। তাই সিদ্ধান্ত নিল, কোথাও পালিয়ে যাবে। পালানোর জন্য টাকা জমাতে থাকে।
মারের ভয়ে মা’র সামনে পড়তে চায় না। সবসময় নিজেকে আড়াল রাখার চেষ্টা করে। কেবল কাজের মহিলা দুলি খালা তার সহায়। এক সময় বাড়ির সবাই তপুর ওপর অত্যাচার শুরু করলে সে বাড়ি থেকে পালায়।
সহপাঠী প্রিয়াঙ্কা ওকে খুঁজে করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে ও। স্বপ্ন দেখাতে থাকে। তপু একসময় বদলে যায়। সবাইকে অবাক করে দিয়ে গণিত অলিম্পিয়াডে চ্যাম্পিয়ানদের চ্যাম্পিয়ান হয়। কিন্তু তারপরও পরিবার তাকে মেনে নিতে পারেনি। অত্যাচার চলে সেই আগের মতোই।
তবে এখানেই গল্পের শেষ নয়। তপুর জীবনের সবটুকু জানতে চাইলে তোমাকে পড়ে ফেলতে হবে পুরো বইটি। আসলে পুরোটা না পড়ে বইটি মাঝপথে ফেলে উঠতে পারবে না, আমিও পারিনি।