১৯৯২ সালে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘হীরের আংটি’ মুক্তি পায়। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘উনিশে এপ্রিল’, ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দহন’ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। ১৯৯৯ সালের ‘অসুখ’ বাংলা ভাষায় সর্বশ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্ম হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করে।
তার ১২টি চলচ্চিত্র জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়াও পেয়েছেন বহু আন্তর্জাতিক সম্মাননা। নব্বইয়ের দশকের গোড়া পর্যন্ত বাংলা ছায়াছবিতে যে বন্ধ্যাত্ব চলছিল, তা কাটিয়ে উঠতে ঋতুপর্ণ ঘোষের অবদান ছিল অসামান্য।
ঋতুপর্ণ ঘোষ ২০০৩ সালে প্রথম অভিনয় করেন। ২০১১ সালে তিনি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’ ও সঞ্জয় নাগের ‘মেমরিজ ইন মার্চ’ এবং নিজের ‘চিত্রাঙ্গদা’ ছবিতে অভিনয় করেন। টেলিভিশন চ্যানেলেও তিনি দুটি সেলিব্রিটি চ্যাট শো সঞ্চালনা করেন। বাংলা ফিল্ম ম্যাগাজিন ‘আনন্দলোক’ নামের পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন ১৯৯৭ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি বেশ সক্রিয় ছিলেন। মৃত্যুর মাত্র দুদিন আগে তিনি টুইটারে লিখেছিলেন, ‘সত্যান্বেষী’র শুটিং শেষ।’ শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোয়েন্দা চরিত্র ব্যোমকেশ বক্সীকে নিয়ে তৈরী হচ্ছিল ছবিটি। তার অকাল প্রয়াণে সর্বশেষ ছবিটি মুক্তি দেয়া হয় অন্যদের তত্বাবধানে।
ঋতুপর্ণ ঘোষ বরাবরই ঢেকে রাখা, না বলা, রাখঢাক করা সামাজিক যৌনতার গোপনীয়তা ভেঙেছেন। ভেতরকার অবদমনকে বাইরে নিয়ে এসেছেন। চলচিত্রে তুলে ধরেছেন সামাজিক মানুষের রাখঢাক করার কষ্টগুলো।
আগে পুরুষদের পোশাক পরলেও মৃত্যুর আগে শেষ কয়েক বছর তিনি মহিলাদের পোশাকই পরতেন। এজন্য তাকে নিয়ে অনেকে ঠাট্টা তামাশা করলেও তিনি নিজের চিন্তাভাবনা থেকে সরে আসেননি। নিজের শর্তেই জীবন কাটিয়েছেন।
ঋতুপর্ণ ২০১৩ সালের ৩০ মে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।