শিশুর বাসযোগ্য পৃথিবী চাই

পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় চলছে হানাহানি আর সংঘাত। এ হানাহানির কারণ শিশুরা জানে না। তারা কারণ খুঁজতেও চায় না। তবুও সংঘাত আর যুদ্ধের সময় সবচেয়ে অসহায় থাকে শিশুরাই। শিকার হয় নিষ্ঠুরতার।
শিশুর বাসযোগ্য পৃথিবী চাই

প্রতিদিনই গণমাধ্যমে দেখা যায় শিশুমৃত্যুর খবর। সহিংসতার শিকার হওয়া শিশুদের বীভৎস ছবি কিংবা মৃতদেহের ছবিও অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে বেশ কয়েকবার। শিশুদের প্রতি এমন নির্মমতা হয়তো সয়েই গিয়েছে আমাদের।
 

এসব ছবি ছড়িয়ে যাওয়ার পর রীতিমতো উত্তাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সোচ্চার হয়ে উঠে সবাই। এরপর আবার দমে যাওয়া। হঠাৎ জেগে উঠা মানবতার ফের ঘুমিয়ে পড়া। আয়লানদের কথা এখন আর কজনই মনে করে?

দুইদিন আগেও সিরিয়াতে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। সিরিয়ার শহর আল লাতামিনাহতে বিস্ফোরিত হয়েছে প্যারাসুট বোমাটি। সংবাদমাধ্যম দ্যা ডেইলি মেইল তার ভিডিও চিত্র প্রকাশ করেছে।

দেখা গেল জায়গাটা ধোঁয়ায় ছেয়ে গিয়েছে। একজন কোলে করে এক শিশুকে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসলেন। শোনা যাচ্ছিল শিশুর কান্নার আওয়াজ। দেখা গেল আহত এক শিশু কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসছে ধ্বংসস্তুপ থেকে। তার মুখ রক্তাক্ত হয়ে আছে।

১৬ এপ্রিল বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানায় সিরিয়ার এক বাসে বোমা হামলায় ১২৬ জন মারা গিয়েছে। এদের মধ্যে কমপক্ষে ৬৮ জন শিশু।

মার্চে দামেস্কে এক বোমা হামলায় ছয় শিশুসহ নিহত হয়েছিল ১৪ জন।

২০১৬ সালেও শিশুদের দূর্গতি ছিল চরমে। ২০১৬ সালকে সিরিয়ার শিশুদের জন্য সবচেয়ে জঘন্য বছর হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলো ইউনিসেফ। ইউনিসেফ জানায় ১.৭৫ মিলিয়ন শিশু বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়ে গিয়েছে। 

শুধু সিরিয়াতেই নয়, আরো কিছু দেশে শিশুরা হুমকির মুখে। তাদের যেন বেঁচে থাকার নিশ্চয়তাটুকুও নেই।

ইরাকি নিউজ জানিয়েছে ২০ এপ্রিল ইরাকের রামাদির উত্তরে এক বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে দুই শিশু। এ মাসেই স্থলমাইন বিস্ফোরণে পাকিস্তানে দুই শিশুসহ অন্তত দশ জন নিহত হয়েছেন। ইয়েমেনে যুদ্ধে তিন বছরে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় দেড় হাজার শিশু। এরকম সংবাদ রয়েছে ভুরিভুরি।

একটু শান্তিতে বাঁচার আশায় নিজেদের দেশ ছেড়ে এ শিশুরা হয়ে উঠে শরণার্থী। ইউনিসেফের দেওয়া তথ্য অনুসারে ২.৫ মিলিয়ন শরণার্থী শিশু রয়েছে সিরিয়ায়। নতুন ঠিকানায় এসে ঘর গড়ে তারা। তুরস্ক, জর্ডান, মিশরসহ প্রভৃতি দেশে আশ্রয় নেয় তারা।

সেখানে শুরু করে এক নতুন জীবন। স্বপ্ন দেখে নতুন জীবনের। কিন্তু এক ভয়াল স্মৃতি তাড়া করে তাদের। প্রিয়জনকে হারানো কিংবা বিস্ফোরণে আহত হওয়ার ঘটনা।

শরণার্থীদের নৌকাডুবির ঘটনাও কম নয়। মার্চে ইয়েমেনে শরণার্থীদের নৌকাতেও হামলা হয়। শিশুসহ নিহত হয় ৪২ জন।

এ বোমা বিস্ফোরণের পেছনে যে কারণই বলা হোক না কেনো এর পেছনে শিশুদের কি কোনো দায় আছে? নিঃসন্দেহে নেই। তাহলে কেন এ নির্মমতা সহ্য করে যেতে হবে তাদের? শিশুদের এ কান্না কবে পৌঁছাবে ধ্বংসকারীদের কানে?

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য প্রায় শতবর্ষ আগে ‘ছাড়পত্র’ কবিতায় শিশুর জন্য পৃথিবীর জঞ্জাল সরানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। অঙ্গীকার করেছিলেন শিশুর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলার। সেই কবিতার পর পেরিয়ে গিয়েছে বহুদিন। কিন্তু শিশুরা আজও পায়নি তাদের জন্য এক বাসযোগ্য পৃথিবী।
 

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com