রোকেয়া ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী ছিলেন। তার মা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী। রোকেয়ার দুই বোন করিমুননেসা ও হুমায়রা আর তিন ভাই যাদের একজন শৈশবে মারা যায়।
তৎকালীন মুসলিম সমাজ ব্যবস্থা অনুসারে রোকেয়া ও তার বোনদের বাইরে পড়াশোনা করতে পাঠানো হয়নি। তাদেরকে ঘরে আরবি ও উর্দু শেখানো হয়। তবে রোকেয়ার বড় ভাই ইব্রাহীম সাবের আধুনিকমনস্ক ছিলেন। তিনি রোকেয়া ও করিমুন্নেসাকে ঘরেই গোপনে বাংলা ও ইংরেজি শেখান।
১৮৯৮ সালে ১৮ বছর বয়সে রোকেয়ার বিয়ে হয় ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে। বিয়ের পর তিনি 'বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন' নামে পরিচিত হন। তার স্বামী রোকেয়াকে লেখালেখি করতে উৎসাহ দেন এবং একটি স্কুল তৈরির জন্য অর্থের যোগান দেন। রোকেয়া সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯০২ সালে 'পিপাসা’ নামে একটি বাংলা গল্প লিখে সাহিত্য জগতে পা রাখেন।
১৯০৯ সালে সাখাওয়াত হোসেন মারা যান। এর পাঁচ মাস পর রোকেয়া সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল নামে একটি মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন ভাগলপুরে। প্রাথমিক অবস্থায় স্কুলে ছাত্রী ছিল আট জন। চার বছরের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪-তে। ১৯৩০ সালের মধ্যে এটি হাই স্কুলে পরিণত হয়।
স্কুল পরিচালনা ও সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রোকেয়া নিজেকে সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রাখেন। ১৯১৬ সালে তিনি মুসলিম বাঙালি নারীদের সংগঠন “আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম” প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন সভায় তার বক্তব্য তুলে ধরেন। ১৯২৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলার নারী শিক্ষা বিষয়ক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।
তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনা হলো সুলতানাস ড্রিম। এটিকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইলফলক ধরা হয়। তার অন্যান্য গ্রন্থগুলি হলো পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী, মতিচুর। নবনূর, সওগাত, মোহাম্মদী ইত্যাদী পত্রিকায় তিনি লেখা প্রকাশিত হয়।
১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া মৃত্যুবরণ করেন।