শিশুরা শুভ্র, নিষ্পাপ। তাই শিশুদের জন্য চাই এক বর্ণিল পৃথিবী। কিন্তু চারপাশে কি দেখছি আমরা? হত্যা, নির্যাতনের ভয়ে শিশুরা যেন অসহায়। আমার মনে হয় শিশুর নির্মল হাসি নয়, এখন শুধু তাদের চাপা গোঙানি শব্দ।
শিশু হত্যা, পাচার ও নানা রকম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিশুরা। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিসংখ্যান বলছে, এ বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সাতশ ৫৬ জন শিশু নানাভাবে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
এর মধ্যে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় একশ ৩৮ জন শিশু, নির্যাতনের পর হত্যা করা হয় পাঁচ জনকে। নানা নির্যাতনে হত্যার শিকার হয় ৯৪ জন শিশু। এছাড়া পাচার হয় ৯২ জন আর পাচারের পর উদ্ধার করা হয়েছে ৬৭ জনকে। পাচারের পর হত্যার শিকার হয় ১০ জন শিশু।
স্কুলে পড়তে গিয়েও নিস্তার নেই যেন তাদের। মানসিক শারীরিক নির্যাতনে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে দেশের ভবিষ্যৎ। এই পরিসংখ্যান থেকেই জানা যায়, এ চার মাসে স্কুলে নির্যাতনের শিকার হয় একশ ৬৬ জন।
জানা যায়, এ চার মাসেই নানা কারণে পিটিয়ে হত্যা করা হয় সাত জনকে।
সমাজে দিনকে দিন নির্মমতা বেড়ে যাচ্ছে। আর এই নির্মমতার সহজ শিকার হচ্ছে শিশুরা। প্রতিদিন বাড়ি থেকে বের হলেই আমার মনে হয় ঘরে ফিরতে পারবো তো? নাকি কোনো কারণ ছাড়াই নির্যাতনের শিকার হব।
আমরা কতটা অসহায় তাই না? ইদানিং দেখছি মা বাবা ও আত্মীয় স্বজনের হাতে শিশুরা নির্যাতিত হচ্ছে। তাহলে তারা কোথায় যাবে? কার কাছে গেলে মিলবে স্বস্তি!
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিসংখ্যানে জানা যায়, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শুধুমাত্র বাবা মার হাতে খুন হয় ২৭ জন শিশু। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের (বিএসএএফ) তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে এক হাজার ৬৯ শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ২৯২, ২০১৪ সালে ৩৫০, ২০১৩ সালে ২১৮ ও ২০১২ সালে ২০৯ জন শিশু খুন হয়েছে।
এছাড়া এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চার বছরে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৯৭৬ শিশু। গত বছর এই নির্যাতনের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ২০১৫ সালে ৫২১ শিশুকে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। যার মধ্যে দলবেঁধে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় ৯১ শিশু।
শিশু অধিকার রক্ষায় ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ প্রণয়ন করে। ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ এই সনদে সমর্থন করে এবং ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় শিশুনীতি প্রণয়ন করে। কিন্তু সেসব নীতি কাগজেই সীমাবদ্ধ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এসব নীতিকে আলোর মুখ দেখতে দেয় না। ফলে অপরাধীরা নির্বিঘ্নে পার পেয়ে যাচ্ছে এবং শিশুদের ওপর সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিছু বিচার হয়তো হয় কিন্তু সিংহভাগই চাপা পড়ে থাকে।
আমরা সবাই মিলে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে শিশুদের নিরাপদ শৈশব উপহার দিতে পারি না? অবশ্যই পারি। শুধু চাই সচেতনতা।