বামনেরা মানুষের সম্মান চান

গোপালগঞ্জের মেলায় এক সার্কাস দলে খেলা দেখাচ্ছিলেন সমীর সরকার (৩২) ও আমিনুর আলী(২৫)। বামন হওয়ার কারণে ওই দুজন মানুষের জায়গা হয়েছে সার্কাসের ভাঁড় হিসেবে।

জেলার ওড়াকান্দি গ্রামে হরিচাঁদ ঠাকুরের মেলায় এ বছরের গোড়ার দিকে একটা সার্কাসের দলের সাথে এসেছিলেন তারা।  

দুজনেই রঙ মেখে সঙ সেজে দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটছিলেন। দর্শকেরা মজা পাচ্ছিল। কিন্তু তাদের সাথে কথা বলে জানা গেল, মানুষকে আনন্দ দিলেও তাদের মনে নেই কোন আনন্দ। কারণ মানুষ তাদের দেখে মজা পায় কিন্তু সম্মান করে না। 

তাদের দেহের গড়ন দেখিয়ে মানুষকে মজা দেয়াটাই তাদের কাজ হলেও তারা কষ্ট পান। তবু শরীরের এই গঠনকে কাজে লাগিয়েই বেঁচে আছেন। কষ্ট চেপে রেখেও মানুষকে আনন্দ দেয়ার কাজ করে চলেছেন।    

সমীর সরকারের জানালেন তার দুর্বিসহ জীবনের কথা। তার বাড়ি পটুয়াখালী। বামন হওয়ার কারণে ১৫ বছর বয়সে তার পরিবার তাকে সার্কাসের দলে দিয়ে দেয়।

তার স্বপ্ন ছিল বড় মানুষ হবার। কিন্তু দুঃখ করে বললেন সমীর, “এ সমাজ আমাদের মত মানুষের জন্য নয়।”  

মাদারীপুরের আমিনুর আলী। তিনি জানান, মা-বাবা মরে যাওয়ার পর তার বড় ভাই বার বছর বয়সেই তাকে সার্কাসের দলে দিয়ে দেন।  

“স্বপ্ন দেখতাম অন্যদের মত ঘর-সংসার করব, কিন্তু ভাগ্যে তা নাই”, বলেন তিনি।  

তারা দুজনেই আক্ষেপ করে জানালেন, সার্কাসের দলে কাজ করেন বাধ্য হয়েই। অন্য কোন সম্মানের কাজে তাদের কদর নাই। তারা যেন এ সমাজের অভিশাপ।   

এছাড়াও তাদের কাজ খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এ কাজে জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই, সংসারেও তাদের জন্যে কোন মায়া করার লোক নাই।

সমীরের উচ্চতা তিন ফুট আর আমিনুরের তিন ফুট এক ইঞ্চি। ওরা বয়সে বাড়ে কিন্তু শরীর একটি নির্দিষ্ট সময় পর আর বাড়ে না।  

বিশেষজ্ঞদের মতে, ছোটবেলার অসুখ, বংশগত কারণ বা বেড়ে ওঠার হরমোনজনিত ঘাটতির কারণে তারদের শরীর বাড়ে না।  

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com