জীবিকার তাগিদে ঝুঁকিতে জীবন
ঠাকুরগাঁও শহরের বিসিক শিল্প নগরীর ঝালাইয়ের কারখানায় কয়েক জন শিশু শ্রমজীবীর সঙ্গে কথা হয় হ্যালোর। এদের বয়স নয় থেকে ১৪ এর মধ্যে।
এদের মধ্যে আরিফ হোসেন নামের একজন জানায়, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে স্কুল ছাড়তে হয়েছে তাকে। সাত জনের সংসার চালাতে বাবা হিমশিম খাচ্ছেন। বাবাকে সাহায্য করতেই পড়া ছেড়েছে ও।
ও বলে, “প্রতি সপ্তাহে চারশ টাকা পাই। এরমধ্যে দুশো টাকা বাড়িতে দেই।”
এ কাজে ঝুঁকি আছে জেনেও কেন করে জানতে চাইলে হেসে বলে, “টাকা বেশি দেয়।”
অনিন্দ্য পাল (১১) নামে আরেক শিশু বলে, “আমার মতো অনেক শিশু এখানে কাজ করে। আমরা সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কাজ করি। তবে একটু এদিক ওদিক হলে মালিক মারধর করে।”
ঝালাই কারখানাটির মালিক আলমের সঙ্গে কথা হয় হ্যালোর।
তিনি বলেন, “অভিভাবকের অনুরোধে এসব শিশুদেরকে কাজ শেখাই। দোকান থেকে প্রতি সপ্তাহে তিনশ থেকে চারশ টাকা করে দেওয়া হলেও ওরা সপ্তাহে একশ থেকে দুশো টাকা করে বকশিশ পায়।”
আলমগীর (১৩) নামে আরেক শিশু বলে, “আমার বাড়ি সদর উপজেলার তিন নং আকচা ইউনিয়নে। আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। বাবা মানুষের বাসায় কাজ করেন। অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে এই দোকানে কাজ করছি।”
হোটেলে কাজ করা আরেক শিশু বক্কর হোসেন জানায়, বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারে তাগিদে হোটেলে কাজ করতে আসে।
ও বলে, “এখানে যা পাই মা ও ছেলের সংসার চলে যায়। এক সময় আমিও স্কুলে পড়তাম কিন্তু এখন স্কুলে যেতে পারি না।”
বেসরকারি সংস্থা ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. শহীদ উজ জামান বলেন, “২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত করা একটি জরিপে আমরা দেখেছি ঠাকুরগাঁও জেলায় মোট দুই হাজার পাঁচশ শিশু শ্রমজীবী রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় এক হাজার চারশ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে।”
ঠাকুরগাঁও জেলা শিশু কর্মকর্তা জবেদ আলী বলেন, “শিশু শ্রম বন্ধে তারা নানা কাজ করছেন। অভিভাবকদের ডেকে সচেতন করছেন, ঝুঁকিপূর্ণ কাজের প্রভাব জানাচ্ছেন।”