বাতাসী রাণী ও সমির উদ্দিন কৃষিক্ষেত্রে দিনমজুরের কাজ করেন। মাঠে ফসলের বীজ বপন ও আগাছা পরিষ্কার করে সমির উদ্দিন দৈনিক মজুরি পান দুইশ টাকা। একই কাজ করে বাতাসী রাণী পান দেড়শ টাকা।
সমির উদ্দিনের থেকে ৫০ টাকা মজুরি কম পাওয়ার কারণটা নিজেই জানালেন বাতাসী রাণী।
তিনি বলেন, “আমি তো মহিলা মানুষ আর উনি পুরুষ। এজন্যই মহাজনরা হামাক টাকা কম দেয়। মহিলা মানুষ বলে হামরা নাকি কাজ কম করি।”
তিনি আরও বলেন, “পুরুষলা যতক্ষণ কাজ করে ততক্ষণ হামরা মহিলারাও কাজ করি।
“মহাজনের কাছত বেশি টাকা চাইলেই কাজ থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়।”
বেসরকারি সংস্থা এমকেপির তথ্য মতে, ঠাকুরগাঁওয়ের প্রায় এক লাখ নারী শ্রমিক মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।এদের কেউ ইট ভাটায়, কেউ কৃষি ক্ষেত্রে আর কেউবা রাজ মিস্ত্রীর যোগালির কাজ করেন।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিয়ে কাজ করলেও এখনও গ্রামাঞ্চলে রয়েছে আগের চিত্রই।
পীরগঞ্জ উপজেলার মিত্রবাটি গ্রামের নারী শ্রমিক মাসুদা বেগম বলেন, “সংসারের অভাব দূর করার জন্যই মাঠে কাজ করি। কিন্তু পুরুষের সমান কাজ করেও কম টাকা পাই।”
ক্ষোভ প্রকাশ করে মাসুদা বলেন, “আমার কি সংসার-সন্তান নাই। টাকার জন্যই তো মাঠে কাজ করি। আর টাকা কেন কম দিচ্ছে এই প্রতিবাদ করলেই কাজ আর জুটে না।”
মাসুদার মতো একই অভিযোগ লাভলী আকতারের।
তিনি বলেন, “নারী-পুরুষের বলে সমান অধিকার। মজুরির ক্ষেত্রেই বুঝি এই অধিকারটা নাই। কাজ ভেদে পুরুষদের তুলনায় আমরা নারীরা ৫০ থেকে একশ টাকা পর্যন্ত কম পাই।”
নারী শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি আদায়ে নারী শ্রমিক সংগঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ঠাকুরগাঁওয়ের বেসরকারি সংস্থা মানবকল্যাণ পরিষদের জেন্ডার উন্নয়ন কর্মকর্তা মৌসুমী রহমান।
তিনি বলেন, “রাজধানীতে যেমন গার্মেন্টস শ্রমিকদের সংগঠন আছে, গার্মেন্টেসে নারী-পুরুষ সবাই সমান বেতন পায়,নিজেদের অধিকার তারা আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করে নেয়। তেমনি গ্রামাঞ্চলেও নারী শ্রমিকদের সংগঠন করে নিজেদের অধিকার আদায় করতে হবে।”
এ বিষয়ে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোর্শেদ আলী খান বলেন, “সরকারিভাবে আমরা নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে কাজ করে যাচ্ছি। বিভিন্ন সভা-সেমিনার করে এইসব বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করছি। গ্রামাঞ্চলে নারী-পুরুষের সমতা আসতে আরও কিছু সময় লাগবে।”
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঠাকুরগাঁও।