হাটের নরসুন্দর বনাম আধুনিক সেলুন

মাগুরা জেলার দীঘা ইউনিয়নে পাল্লা গ্রামের হাটে পথের ধারে কাঠের পিঁড়িতে বসে খদ্দেরের অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেল নরসুন্দর সুকুমার পরামানিককে।
হাটের নরসুন্দর বনাম আধুনিক সেলুন

বাপ-দাদার ‌পেশা আজও আঁকড়ে আছেন সুকুমার। কারণ আর কোনো কাজ জানেন না তিনি। দরিদ্র মানুষদের কেউ কেউ আজও ইটের ওপর বসে তাদের হাঁটুর কাছে মাথা পেতে দেন বলেই বেঁচে আছেন তারা।    

এ কাজে সংসার চলে না, জানালেন এই নরসুন্দর। 

'একসময় এমন কোন গ্রাম ছিলনা যেখানে মিলত  না দুই চার ঘর পরামানিক পরিবার। এখন ১০ গ্রাম খুঁজেও এদের তেমন দেখা পাওয়া যায় না,' সুকুমারের ভাষ্য। 

তিনি বলেন, ‘আগের আমলে আমাদের অনেক কদর ছিল।  এখন আর নেই। আগে কাপড়ে জড়ানো ছোট্ট কাঠের বাক্স বগলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চুল-দাড়ি কামায়ে (কেটে) দিয়ে দিয়ে আসতাম।

‘আর এখন দিনের বেশির ভাগ সময়ই হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে হয় পথের ধারে।’

‘এখন খুব কম লোকই আমার কাছে এসে চুল কাটায়। সারাদিনে আজ মাত্র দুজন খদ্দের পেইয়েছি।

‘মাথা পিছু ২০ টাকা পাই। এতে সংসার চলে না।

‘আগে বাড়ি বাড়ি ডাক পড়ত, এখন আর কেউ ডাকে না। তাই হাটে হাটে ছুটি আর বাড়ির কাছের নাগড়া বাজারেই বসি। এখন সবাবই দামি সেলুনে চুল কাটাইতে চায়।’  

শিরগ্রাম বাজারে সেলুনের মালিক কিশোর পরামানিক হ্যালোকে বলেন, ‘আমার ‍সেলূনের ব্যবসা বেশ ভালো। সব সময় ভিড় থাকে। প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি টাকা আয় হয়।

‘কাজের চাপ বেশি থাকলে কর্মচারি নেওয়া লাগে।’  

আধুনিক ও ঝকমকে চুল-দাড়ি কাটার সেলুন প্রায় দখল করে ফেলেছে পুরান নাপিতদের জায়গা। তবে এখনও হাটবারে এদের দেখা যায়। হাট ফিরতি গরিব মানুষেরা কম পয়সায় চুল-দাড়ি কাটতে আকাশের নিচে পথের ধারেই বসে পড়েছেন নরসুন্দরের পেতে রাখা ইটের ওপর। এই নরসুন্দররা সমাজে পরামানিক বা নাপিত নামেই বেশি পরিচিত। এসব নাপিত ও খদ্দের দুদলের চেহারাতেই দারিদ্র্যের ছাপ স্পষ্ট।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com