আইনের তোয়াক্কা না করে পাখি শিকার

ঠাকুরগাঁওয়ে পাখি শিকারিদের হাতে মারা পড়ছে বিভিন্ন জলাশয় ও ছোট ছোট বিলে আশ্রয় নেওয়া অতিথি পাখি।

শিকারিরা বন্দুক, বিষটোপ, জাল ও বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে এসব পাখি নিধন করছেন। পাখি শিকার করা আইনত নিষিদ্ধ হলেও এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শত শত সাদা বক ও পানকৌড়ি এখানে আশ্রয় নিয়েছে। কিছু মানুষ লাঠি হাতে পাখিগুলোকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। আর তাড়া খেয়ে জালে ও ফাঁদে পড়লে পাখিগুলোকে খাঁচায় আটকানো হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানায়, শীতের শুরুতেই উপজেলার জলাশয় ও ছোট ছোট বিলগুলোর পানি নেমে যায়। এ সময় অল্প পানিতে খাবার সংগ্রহের জন্য বিলে প্রচুর দেশি ও অতিথি পাখি আসে। চলতি বছর জলাশয় ও বিলগুলোতে আমন ধানের আবাদ ভালো হয়েছে। প্রচুর মাছও দেখা যাচ্ছে। ফলে বিলে ঝাঁকে ঝাঁকে বালিহাঁস, বাটুল, চখাচখি, শামখোল, পানকৌড়ি, বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসতে শুরু করেছে।

প্রকাশ্যে এসব পাখি বিক্রি হচ্ছে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ীহাট, নেকমরদহাট,  গড়েয়াহাট, খোচাবাড়ীহাট, ফাড়াবাড়িসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায়।

পাখি ধরে শিকার করে বিক্রির কথা স্বীকারও করেছেন টাঙ্গন ব্যারেজ এলাকায় পাখি শিকারি অলিল চন্দ্র। তিনি জানান, পাখি শিকার করে বাজারে বিক্রি করেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আকচা ইউনিয়নের পাখি শিকারি শামসুল আলী বলেন, "বাজারে পাখির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই কোনোমতে ধরতে পারলেই বিক্রি করতে সমস্যা হয় না।"

তিনি জানান, প্রতি জোড়া সাদা বক আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা, চখাচখি একশ থেকে একশ ২০, কাইয়ুম পাখি সাড়ে তিনশ থেকে চারশ ও বালিহাঁস চারশ থেকে পাঁচশ টাকায় বিক্রি হয়।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রেজিয়া সুলতানা বলেন, "পাখিরা শুধু প্রকৃতির শোভাবর্ধন করে না, ভারসাম্যও রক্ষা করে। পোকামাকড় খেয়ে এরা কৃষকের উপকার করে। কিন্তু আইন থাকলেও পাখি নিধন বন্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই।"

পরিবেশ কর্মী রেজাউল হাফিজ রাহী জানান, পাখি রক্ষায় প্রশাসনসহ স্থানীয়দের এগিয়ে আসা জরুরি।

হ্যালোর সঙ্গে কথা হয়। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের। তিনি বলেন, "পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু আমাদের করার কিছু নেই। এটা বন বিভাগের দেখার দায়িত্ব।"

শিকারীদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানান ঠাকুরগাঁও বন বিভাগের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com