এক হাতের পিইসি পরীক্ষার্থী

বাম হাতের কনুই থেকে বাকি অংশ নাই সীমা আকতারের। সবাই তাকে ডাকে ঠুটি বলে। তাতে তার কিছুই যায় আসে না। এক হাত নিয়েই সে সব কাজ করে। এবার পিইসি পরীক্ষাতেও বসেছে সে।

অন্য স্বাভাবিক গড়নের ছেলেমেয়েদের মতো সেও স্বপ্ন দেখে, লেখাপড়া করে মানুষ হওয়ার।

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার নাকাটি হাট শহীদ আ. জব্বার উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছে সীমা। জন্মের পর থেকেই বাম হাত নাই কিন্তু লেখার জন্য ডান হাত তো আছে। সেই হাত দিয়েই সে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পরীক্ষার খাতায় লিখছে।  

পরীক্ষা শেষে হ্যালোর সাথে কথা হয় তার। ওর বাড়ি কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের আকাশীল গ্রামে। বড় দুই ভাই আছে। সবার ছোট সে। বাবা মোহাম্মদ মসলিম পেশায় কৃষি কাজ করেন আর মা ফরিদা বেগম গৃহিনী।  

সীমার স্বপ্ন, একদিন লেখাপড়া করে ডাক্তার হয়ে দেশের মানুষের সেবা করবে এবং পরিবারের দুঃখ দূর করবে। সে জানায়, নিজের ইচ্ছাশক্তি ও বাবা-মায়ের উৎসাহের কারণেই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে মাকে সংসারের কাজেও এক হাত দিয়েই সাহায্য করে সে। ও বলে, বাবা-মা আমাকে খুব ভালোবাসে। কখনো রাগ করে না। এছাড়া আমি আমার নিজের সব কাজ এক হাত দিয়েই করতে পারি।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে পড়ালেখায় বিশেষভাবে সাহায্য করে এসেছেন, বলে জানায় ও। সহপাঠিরাও আমার সাথে বন্ধুর মতোই আচরণ করে। সবার সাথে আমি খেলাধুলা করি। ‘কিন্তু আমার আত্মীয়-প্রতিবেশী অনেকেই আমাকে ঠুটি বলে ডাকে। তখন আমার খুব কষ্ট হয়।’

একথা জানিয়েই কাঁদতে শুরু করে সীমা। ও বলে, ‘আমার এক হাত নেই বলে আমাকে ঠুটি বলে উপহাস করে। আমি লেখাপড়া করে বড় হয়ে প্রমাণ করতে চাই ঠুটিরাও মানুষ।’

এবিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সীমার মতো ছেলেমেয়েরা আমাদের সমাজেরই অংশ। দেশের উন্নয়নে এরাও কাজে লাগবে। এদের উৎসাহ দিয়ে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। এদের উপহাস করা যাবে না।’

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com