বাঁশের পণ্য সামগ্রি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার চার গ্রামের বাঁশমালী সম্প্রদায়ের মানুষ।
Published : 22 Jul 2016, 04:49 PM
বৃহস্পতিবার উপজেলার বথপালিগাঁও, তাজপুর, দস্তমপুর ও সিঙ্গারোল গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সংসারের কাজ শেষে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বাড়ির আঙিনায় বাঁশের পণ্য তৈরির কাজ করছেন। আর স্কুল ছুটি শেষে ছেলে-মেয়েরাও তাদের বাবা-মাকে এ কাজে সহযোগিতা করছে।
ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া মান্না চন্দ্র রায় ও স্বপন চন্দ্র রায় জানায়, স্কুলছুটির পর বাবা-মায়ের সাথে তারাও এসব তৈরিতে সাহায্য করে।
বাবার কাছেই এ কাজ করতে শিখেছে বলে তারা জানায়। লেখাপড়া করে মান্নার ইচ্ছে ছিল শিক্ষক, পুলিশ বা ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু টাকার অভাবে সেই স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে এখন। তবু তারা এ কাজ করতে চায় না। শিক্ষিত হয়ে অন্য সম্মানজনক পেশা গ্রহণ করতে চায়। কারণ হিসেবে তারা জানায়, এ পেশায় অভাব ঘোচে না।
স্বপন বলে, ‘ডাক্তার বা পুলিশ হইতে গেলে অনেক টাকা লাগবে। এত টাকা বাবার নাই।’
এরা বাঁশ দিয়ে তৈরি করে পাখা, ডালা, খাঁচি, কুঁজি, চাটাই, কুলাসহ বাঁশের বিভিন্ন সামগ্রি।
বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়েই চলে সংসারের খরচ। সকালে বাঁশ সংগ্রহ করে কাজের শুরু হয় জানিয়ে বাঁশমালী ছুটুন চন্দ্র রায় বলেন, ‘এরপর বাঁশ কেটে ফালি করে স্ত্রীকে নিয়ে কুলা তৈরির কাজ করি সন্ধ্যা পর্যন্ত।’
'ধান ও গম মাড়াইয়ের সময় বাঁশের তৈরি কুলা, ডালাসহ এসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়,' বলেন নীরদাবালা
তিনি বলেন, ‘পরিবারের সবাই একসাথে সকাল থেকে রাইত (রাত) পর্যন্ত বাঁশের জিনিস বানাই আর হাটের দিন এইলা বিক্রি করিবা লেগাই (নিয়ে যাই)’।
তার দুই ছেলেও এই কাজ করে বলে জানান তিনি। ‘সরকারিভাবে যদি কোন সাহায্য বা আর্থিক ঋণ দেয়া হয় তাহলে অনেক পণ্য তৈরি ও বিক্রি করে আমরা বাঁশমালীরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারব,’ বলেন লিপি রাণী।
তিনি জানান, অল্প পুঁজিতে লাভ কম হয়। পণ্য তৈরিতে যদি খরচ হয় ৫০০টাকা এতে লাভ হয় মাত্র ১০০টাকা।
‘এদিয়ে কোনমতে সংসারের খরচ চলে। ছাওয়ালের পড়ার খরচ জোটে না। ছাওয়াল-পাওয়াল (ছেলে-মেয়ে) এই কাজ করিবাও চাও না।’
তারা কয়েকজন জানান, আর্থিকভাবে সরকারি সহযোগিতা পেলে এই বাঁশমালী সম্প্রদায়ের মানুষরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারবেন বলে আশা করেন। তখন ছেলেমেয়েরাও পড়ালেখা কর মানুষের মতো মানুষ হতে পারবে।