'একজন গুলিবিদ্ধ মুক্তি পানি চেয়েছিলেন'

মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব গ্রামে গণহত্যা চালানো হয়েছে তার মধ্যে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কামান্না গ্রাম অন্যতম।

৭১'র ২৬ নভেম্বর পাকসেনা ও রাজকাররা এই গ্রামে গণহত্যা চালায়। সেদিন ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ ২৯ জন শহীদ হন।

হ্যালোর কাছে সেই দিনের নারকীয় ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী সামেনা বেগম ও আব্দুস সোবহান খান।

সামেনা বেগম বলেন, নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে একদল মুক্তিযোদ্ধা এই গ্রামের মাধব ভূঁইয়ার পরিত্যক্ত বাড়িতে ক্যাম্প বানায়।

"আমরা বাড়ি থেকে তাদের কাঁথা কাপড় দেই। আমার বাড়িতে পাঁচজনকে থাকতে দেই। তাদের অস্ত্র ও গুলি আমার বাক্সে লুকিয়ে রাখতাম।

"এর কদিন পরেই ২৬ নভেম্বর ভোর রাতে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। মাধব ভূঁইয়ার বাড়ি ঘিরে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে পাকমিলিটারি ও রাজাকাররা।"

অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি বলেন, "একজন মুক্তিযোদ্ধা গুলি খেয়ে আমাদের বাড়ির উঠানে এসে পড়ে যায়। তিনি পানি খেতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমি তাকে পানি দিতে পারিনি।

"ঘরের বেড়া কেটে আমার মেয়ে ও বাড়িতে থাকা পাঁচ মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে অন্য গ্রামে চলে যাই।

"পরদিন সকালে গ্রামে ফিরে দেখি লাশ আর লাশ। এখানে সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের নিথর দেহ পড়ে আছে।

"গ্রামের সব লোক মিলে তাদের লাশ নদীর ধারে নিয়ে যায়। ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ আমাদের গ্রামের দুইজন নিহত হন।"

আব্দুস সোবহান খান জানান, তার বাড়িতে দুই জন মুক্তিফৌজকে আশ্রয় দিয়েছিলেন তিনি। 

"ভোরে গোলাগুলি শুরু হলে আমরা পালিয়ে যাই।"

তিনি আরও বলেন, সকালে ফিরে এসে দেখলাম মুক্তিবাহিনীর লাশ চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। নদীর ধারে পাঁচটি গণকবর খুঁড়ে  লাশগুলো কবর দেওয়া হয়।

শৈলকুপা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মনোয়ার হোসেন মালিতা বলেন, শৈলকূপার রাজাকাররা মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পের খবর পেয়ে সেনাবাহিনী নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করে। সেদিন ২৭জন মুক্তিযোদ্ধাসহ ২৯ জন শহীদ হন।

শহীদদের মধ্যে আনিছুর, তাজুল, মাহিম, রাজ্জাক, কাওছার, ছালেক, আজিজ, আকবর, সেলিম, হোসেন, রাশেদ, গোলজার, অধীর, গৌর, মোমিন, শহীদুল, কাদের, ছলেমান, রাজ্জাক, ওয়াহেদ, রিয়াত, আলমগীর, মতলেব, আলী হোসেন, শরিফুল, আলীউজ্জামান, মনিরুজ্জামান, খনী ভূষণ কুন্ডু ও রঙ্গবিবি।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com