আড্ডায় বিজয় দিবস

কদিন আগেই দেশজুড়ে পালিত হল মহান বিজয় দিবস। তার কিছুদিন আগে থেকেই নানান সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা উঠেছিল, ডিসেম্বর মাসের প্রায় শুরু থেকেই ফেইসবুক ব্যবহারকারীরা নিজেদের প্রোফাইল পিকচারে জাতীয় পতাকার ছবি দিয়ে এক নতুন রেকর্ড গড়বে।

তরুণদের মতে, এতে করে তারা বিশ্বের সামনে দেশের ঐক্য ও সংহতি তুলে ধরতে সক্ষম হবে। অপরদিকে, এই তরুণদের মধ্যেই অনেকেই একে আমল দেয় নি। ‘একদিনের দেশপ্রেম’ বলে অবজ্ঞা করেছে। কিন্তু ফেসবুকের ইনবক্স, টাইমলাইন, কফিশপের আড্ডায় এই বিষয়টি বিজয় দিবসের পরেও বেশ ক’দিন ধরেই সরগরম।  

বর্তমান প্রজন্মের কাছে দেশাত্ববোধ আর স্বাধীনার চেতনা আসলে কেমন তা জানতে এই বিষয়টি নিয়েই কথা হয়েছিল কয়েকজন কিশোরের সঙ্গে। পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি-তর্ক-আড্ডায় দারুণ জমে ওঠা সেই আসরের চুম্বক অংশ আজ থাকল ‘হ্যালো’র বন্ধুদের জন্য। 

শুরুতেই সবার উদ্দেশ্যে একই প্রশ্ন, বিশ্বরেকর্ড গড়ার জন্য সম্প্রতি ফেইসবুকে জাতীয় পতাকা প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহার করার চল দেখা গিয়েছে। এই ব্যপারে কার কি মতামত?

প্রশ্নটা লুফে নিয়েই ফাহাদ রহমান অঝোরের দ্বিধাহীন উত্তর, ‘সস্তা দেশপ্রেম’। সমর্থন পাওয়া গেল শিহাব ইমতিয়াজের কাছ থেকেও। কিন্তু এর বিপক্ষে তীব্র প্রতিবাদ সাইমুন ইসলাম অন্তু, নিলয় রঞ্জন নাথ ও আহামেদ শাহীনের। শাহীনের মতে, "আমার বাঙালিপনা আমার অনুভূতির মাঝে লুকিয়ে আছে। আর যদি আমার প্রোফাইল পিকচার দেওয়া এক দিনের বাঙালিপনা হয়, তাহলে তো কোনো দিবসকে ঘিরেই কোনো অনুষ্ঠান হত না, সেগুলোও তো একদিনের জন্যই। “আমি আমার সবটুকু ভালোবাসা দিয়েই এটা করেছি।"  
 
প্রশ্ন উঠল, যে ত্যাগ, তিতিক্ষা, সাধনা, সংগ্রামের ফল আমাদের আজকের এই অস্তিত্ব, বছরের একটিমাত্র দিনেই কেন তার প্রতি খুব তোড়জোড় করে সম্মান,ভালোবাসা দেখাতে হবে? অন্য দিনগুলিতে কেন এই বোধ হারিয়ে যায়?

অভিযোগ স্বীকার করে শাহীনের সরল স্বীকারোক্তি, "এই বিষয়ে, আমি একমত। কথা সত্যি।" অঝোর প্রস্তাব করল, "চল, আমার সকাল ১০:০১ মিনিটে একসাথে নাক ঝাড়ি। এর মাধ্যমে আমরা গিনেস বুকে নাম লেখাবো। এটা মনে করার দরকার নাই যে আমি নাক ঝাড়ার সাথে তুলনা করে পতাকার মর্যাদাকে খাটো করছি। দেশ আসলে বুকের ভিতর জিঁইয়ে রাখার বিষয়। হাবিজাবি ধরণের রেকর্ড করার জিনিস না।"  

এর জবাবে নিলয় বলল," আমার কোনো আপত্তি নাই   কারণ, যা হচ্ছে তাতে ক্ষতি কী? যদি রেকর্ডের জন্য নিজের প্রোফাইল পিকচার পতাকা দেই, তাতে ইমেজ কমার কোনো কারণ দেখি না।"
প্রশ্ন ইমেজ নিয়ে নয়, নিজের স্বকীয়তার সচেতনতা নিয়ে। শুধু রেকর্ডের জন্যই এটা নয়। হৃদয় থেকে কখনো অনুভূতি আসে বলেই করা।  
নিলয়ের উত্তর, " অবশ্যই। তাই তো প্রতিবছর পতাকার ছবি দিয়ে রাখি। আর বাংলাদেশকে হৃদয়ে ধারণ করি। "
অপর পক্ষের একযোগে প্রশ্ন," শুধুমাত্র এক দিনেই?"

নিলয় বলে, “এটার শুরু হয়েছিল যখন আমার এই বোধ জন্মেছে যে আমি বাংলাদেশী এবং তা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকবে।"

"প্রোফাইল পিকচার পতাকা দিলেই কেউ বাঙালি হয় না, আবার না দিলেও  কেউ অবাঙালি হয় না।"

শাহাদাতের কথার সমর্থনে শিহাবের বলে, আমার কাছে এসব রেকর্ড টেকর্ড গড়ে দেশপ্রেম দেখানো পাগলামি ছাড়া আর কিছু না। যদি দেশপ্রেমের চেতনা থাকে তাহলে গত ১১ মাস কি করেছে? শুধু ডিসেম্বরে কেন এই তোড়জোড়?"  

আমার জবাব, জন্মদিন, বাবা দিবস, মা দিবস, বন্ধু দিবস এসবও তো একদিনের। তাই বলে কি সম্পর্ক বা অস্তিত্বও একদিনের?

অনেক যুক্তি ও পাল্টাযুক্তি, আলোচনাকে নিয়ে যাচ্ছিল মূল প্রসঙ্গের বাইরে। তাই আলোচনার সমাপ্তি টানল শিহাব এই বলে যে, আসলে এইসব নিয়ে কথা বলে কোনো লাভ নাই। কারণ এইসব ইস্যুতে যে যেটা বোঝে, সে সেটাই ঠিক মনে করে। সঠিক যুক্তি দেখালেও তা তার ঠিক মনে হয় না, বরং ঝগড়া হয়ে যায়। তাই না বলাই উত্তম। কী ভার্চুয়াল জগৎ কী বাস্তবের দুনিয়া, প্রকাশ্যে বা আড়ালে, রেকর্ড গড়ে অথবা ভেঙে, তরুণ প্রজন্ম স্বাধীনতার চেতনাকে জিঁইয়ে রেখে, দেশকে ভালোবেসে পারস্পরিক সহাবস্থানের মাধ্যমে কাজ করবে। আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশের উন্নতির জন্য চিন্তা করবে সবাই, এটাই এখন মূল চাওয়া।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com