আমার বোনকে পাশবিক নির্যাতন ও তারপর

[ লেখাটি হ্যালোর এক শিশু সাংবাদিকের। শিশুটির নাম প্রকাশ করা হলো না। কিন্তু শিশুটিও মনে করে ঘটনাটি সমাজ সচেতনতায় সহায়ক হতে পারে। তাই তার পরিচয় না দিয়ে ছাপানো হলো। -সম্পাদক]

গত ফেব্রুয়ারির ঘটনা। আমার ছোট বোন ঘরের পাশেই বসে খেলছিল। এক ছেলে এসে ওর সাথে খেলে আর গল্প করে। সে আমার বোনকে লোভ দেখিয়ে পাশের আলু ক্ষেতে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালায়। এতে সে শারীরিকভাবে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে।

এই ঘটনার পর ওকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। খবরটা মুহূর্তে গোপালগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় আমার মা বাবা ওই ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে। তবে মামলা করার আগে আমার বোনকে নিয়ে মা পাশের বাড়ির মোল্লা কাকার বাড়িতে যান। এ ব্যাপারে অনেক সাহায্য করেন তিনি। আর সাহায্য করার অপরাধে তার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া ওরা। হুমকিও দেয়।

আমার মা বাবা তখন বোনকে নিয়ে হাসপাতালে। আমি বাড়িতে ঠাকুমার সাথে একা থাকি। আমাকে নিয়েও মা বাবা ভয়ে ভয়ে থাকেন। এই ঘটনা আমাকে ভয় পাইয়ে দেয়। আমি সারাক্ষণ হুমকি, ভয় আর আতঙ্কে থাকতাম। মাস খানেক স্কুল আর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় আমার। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকি দিনরাত।

আমাদের আর্থিক অবস্থাও খুব একটা ভালো না। তারপরও এই ঘটনায় অনেক টাকা খরচ করতে হয়। ওরা আমার স্কুলে যেতে বাধা দিতে থাকে দিনের পর দিন। আমরা ওদের অত্যাচারে এক পর্যায়ে কোটালীপাড়া ছাড়তে বাধ্য হই।

ভেবেছিলাম আমার আর পড়ালেখা হবে না। বাবা আমাকে আর পড়তে দেবে না। কিন্তু আমার মা-বাবা অনেক বড় মনের মানুষ আর সাহসী। তাই আমি এখন স্কুলে যাই। যদিও ওই ছেলে এখন জেলে তারপরও আমার আমাদের তিন ভাই বোনকে নিয়ে সব সময় চিন্তায় থাকেন মা-বাবা।

আমার মায়ের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। আর ছোট্ট বোনটার দিকে তাকালে মনে হয় আমি নিজেই শেষ করে দিয়ে আসি ওই পশুটাকে।

অনেকেই এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে। আমার বলতে কোন সংকোচ হয় না। আমার কথা শুনে যদি অন্য একজন সচেতন হয় তাহলে আমার ভালো লাগবে। সমাজ সচেতন হলে খারাপ মানুষ ভয়ে থাকবে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com