'শিল্পী নয়, অভিভাবকরা চান তারকা'

টেলিভিশন সাংবাদিক তুষার আবদুল্লাহ। লিখেছেন শিশুদের জন্য। তার লেখা শিশু সাহিত্যের সংখ্যা ছয়।

সম্প্রতি শৈশব ও কৈশোরের নানা স্মৃতি, অভিজ্ঞতা নিয়ে গল্প করেন হ্যালোর সঙ্গে।

হ্যালো: আমি তো শিশু। তাই সবার শৈশব নিয়েই জানতে ইচ্ছে করে আমার।

তুষার আব্দুল্লাহ: আমার শৈশব কেটেছে ঢাকার গ্রিনরোডে স্টাফ কোয়ার্টারে। বাবার চাকরির সুবাদে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত আমরা সেখানে ছিলাম। পরে অবশ্য বাড্ডায় চলে আসি।

কোয়ার্টারের প্রত্যেকটা বাড়ির সামনে বিশাল মাঠ ছিল। আমরা ওই মাঠে ফুটবল খেলতাম। রাস্তায় তখন খুব কম বাস চলত। ওই বাস গোনাতেই ছিল আমাদের আনন্দ। এরপর আমরা বাড্ডায় চলে যাই। ওই এলাকা তখন সবুজ। প্রথম কুয়া দেখি ওখানে গিয়ে। বাড্ডায় ঋতুটা বেশ টের পেতাম। ফুলের গন্ধে, ফলের গন্ধে, মাটির গন্ধে ঠিক বুঝে যেতাম এখন কোন ঋতু। পুকুরে, বিলে জাল ফেললেই ধরা পড়ত বাইম, শোল, বোয়াল আরো কতো মাছ! আমার শৈশবটা ছিল খুব আনন্দের। সারাদিন বাইরে ঘোরাঘুরি করতাম, মন চাইলেই মাটির সাথে গড়াগড়ি। পুকুরে মাছ ধরা, গাছে উঠে ফল পাড়া আরও কত কী!

হ্যালো: আমার স্কুলে যেতে খুব ভালো লাগে। আপনার স্কুলের কোনো ঘটনা মনে আছে?

তুষার আব্দুল্লাহ: আমি ছোটবেলায় পড়া মুখস্থ করতে পারতাম না। আমি তখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। ক্লাসে ‘'আমাদের বিদ্যালয়’' রচনাটি লিখতে দেয়। আমি জানালা দিয়ে খুব ভালো করে দেখলাম স্কুলে কী কী আছে? বন্ধুরা কারা, কতজন। সেটাই নিজের মতো লিখে দিলাম। সেটিই হয়ে গেল সবচেয়ে ভাল লেখা। শিক্ষা জীবনের শেষ পর্যন্ত এভাবেই পার হয়ে গেছি। তবে বই পড়াতে ছিল বিশেষ ঝোঁক।

গণিতে আমার বেশ দুর্বলতা ছিল। এই বিষয়ে পাশ করতাম খুব কষ্টে, টেনেটুনে।

হ্যালো: আপনার শৈশব ও আমাদের শৈশবের মধ্যে পার্থক্য কী?

তুষার আব্দুল্লাহ: সবচেয়ে বড় পার্থক্য আমরা প্রকৃতিকে উপভোগ করতে পেরেছি, তোমরা পারছ না। আমি সবুজ পেয়েছি, মাটির গন্ধ নিতে পেরেছি, গাছ থেকে ফল পাড়তে পেরেছি।

সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, তুমি যে এখন বড় হচ্ছো তা তোমার মা-বাবা তোমাকে বলে দিচ্ছে, কোন ধরণের বন্ধুদের সাথে মিশবে, কার সঙ্গে মিশবে না, কোথায় যাবে, কোথায় যাবে না।

কিন্তু আমার বন্ধুদের মধ্যে কোনো বৈষম্য ছিল না। আমরা সবার সঙ্গে মিশতে পেরেছি। পরিবারের এ নিয়ে কোনো বাধা ছিল না। ভয়ও ছিল না।

হ্যালো: লেখালেখির শুরুটা কোন সময়ে?

তুষার আব্দুল্লাহ: আমি যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি তখন থেকেই কবিতা লেখা শুরু করি। আমার বাংলা শিক্ষক ছিলেন মুজিবুর রহমান স্যার। আমি ক্লাসে উনাকে নিয়ে কবিতা লিখতাম। আর উনি ব্ল্যাক বোর্ডে আমাকে নিয়ে কবিতা লিখে উৎসাহ দিতেন। এভাবে ক্লাসের সবাই জেনে যায় আমি কবি।  

হ্যালো: তখন লেখাপড়ার চাপ কেমন ছিল? আমাদের তো খুব চাপ। 

তুষার আব্দুল্লাহ: শিশুরা এখন পুরোপুরি পরীক্ষার মধ্যে ঢুকে গেছে। কিন্তু আমাদের সময় এমনটা হতো না। শিশুদের মধ্যে এখন সারাদিনই পরীক্ষার ভয় কাজ করে। এখন তো টিচার আসারও রুটিন থাকে। এখন শিশুরা বলতে গেলে প্রতিদিই পরীক্ষা দেয়। এক বাক্যে বলতে গেলে, শিশুরা এখন পরীক্ষাযুক্ত আর আমরা ছিলাম পরীক্ষামুক্ত শিশু।

হ্যালো: টেলিভিশনে শিশুদের জন্য বা তাদের নিয়ে প্রোগ্রাম কম। এটাকে কীভাবে দেখছেন?

তুষার আব্দুল্লাহ: আমি মনে করি শিশুদের অনুষ্ঠানের স্পন্সরের সমস্যা বড় সমস্যা নয়। শিল্পী নয়, অভিভাবকরা চান শিশুদের স্টার বানাতে। ফলে সত্যিকার শিল্পী তৈরি হচ্ছে না। অভিভাবকরা তার জীবনে যা হতে পারেননি তাই হওয়ার তীব্র বাসনা চাপিয়ে দিচ্ছেন শিশুদের ওপর। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবে অবশ্যই চ্যানেলগুলোর উচিত শিশু উপযোগী অনুষ্ঠান বাড়ানো।

হ্যালো: এখনকার শিশুদের প্রতি বড়দের ভূমিকা কী হওয়া উচিত?

তুষার আব্দুল্লাহ: নাগরিক হিসেবে চাইলেই এখন তোমাকে গ্রিনরোড স্টাফ কোয়ার্টারের মাঠ দিতে পারব না। কিন্তু তোমার সাথে যাতে তোমার বাবার সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ণ হয়, তুমি যাতে তোমার জীবনে সঠিক বন্ধু বেছে নিতে পার, তুমি যাতে সবুজ দেখতে পার এই সুযোগটা বড়রাই করে দিতে পারি। শিশুদের সময় দিতে হবে। সময় দিতে না পারার বিপরীতে খুশি রাখার কৌশল হিসেবে শিশুদের হাতে দামি মোবাইল তুলে দেওয়া মোটেই উচিত নয়। শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য চাই অভিভাবকের সঙ্গ।

হ্যালো: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

তুষার আব্দুল্লাহ: তোমাকেও ধন্যবাদ। হ্যালোর বন্ধুদের প্রতি আমার শুভেচ্ছা রইল।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com