আমাদের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার খাষকাউলিয়া চৌদ্দরশি গ্রাম। ওখানে দাদা আর চাচারা থাকেন। ভাঙনের খবর পেয়েই বাবা সেখানে যাচ্ছেন। আমিও সাথে গেলাম।
গিয়ে দেখি বাড়ির জায়গা ফাঁকা ধু ধু। বাড়ির যে অংশটুকু খুলে নেয়া যায় সেগুলো আমার এক দাদীর বাড়িতে অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে। দাদা, চাচা-চাচী আর আমার চাচাতো ভাই বোনেরাও সেখানেই আশ্রয় নিয়েছে।
নতুন করে আবার বাড়ি করা না হওয়া পর্যন্ত তাদের এভাবেই থাকতে হবে।
চৌহালী উপজেলা সদর থেকে শুরু হওয়া এ ভাঙন আমি গ্রামের বাড়ি গেলেই দেখতাম। তবে আমি কখনও ভাবিনি যে আমাদের বাড়িও ভেঙে যাবে।
দাদার কাছে শুনলাম, গত দুবছরে প্রায় গ্রামের প্রায় দুকিলোমিটার তলিয়ে গেছে। এখন উত্তর-দক্ষিণে চৌহালীর পূর্বদিক প্রায় শেষের দিকে।
এইভাবে আর দু-এক বছর ভাঙলে মানচিত্র থেকে বিদায় নিবে চৌহালী উপজেলা। উত্তরে কোণায় টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপলেজার আটাপাড়া গ্রাম হারিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার সব ভবন, হাসপাতাল, পশুহাসপাতাল, মহিলা স্কুল, মহিলা কলেজ, কারিগরি কলেজসহ বহু স্থাপনা, বড় বড় গাছপালা সবই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে জোতপাড়া বাজার ও বাজার সংলগ্ন চৌহালী ডিগ্রি কলেজ ভেঙে যাওয়ার পথে।
বাবার ফুফুর বাড়ির বৈঠক ঘরে দাদার সাথে নদী ভাঙনের গল্প করছিলেন গ্রামের ওয়াহাব দাদু। তার বয়স নব্বইয়ের কোঠায়।
তিনি বললেন, "৬৫ বছর ধরে নদীতে আমার বাড়ি কত বার ভেঙেছে তা হিসাব করে বলতে হবে।
এই বসত ভিটাটা তিনি ১৯৮০ সালের শেষের দিকে করেছিলেন নদীর চর থেকে এসে। সেটাও এবার নদী গর্ভে যাবে বলে তার মন খুব খারাপ।
এসব দেখে শুনে বাবা আর আমিও মন খারাপ করে ঢাকা ফিরলাম।