দারিদ্র্য আমাকে হারাতে পারেনি

জীবনটা বড়ই কঠিন। এই জীবনটাকে সার্থকভাবে গড়ে তুলতে চাইলে অনেক কঠিন সমস্যার পথ পাড়ি দিতে হয়, সে শিক্ষা আমার হয়েছে কৈশোরেই।  

আমার জীবনের বাস্তবতাকে তুলে ধরতে হয়তো আমি অনেক আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারি কিন্তু তবু বলি, আমার আমার যখন জন্ম হয় তখন আমাদের অর্থনেতিক অবস্থা ছিল করুণ যা আমি বড় হতে হতে টের পেয়েছি।

অভাবের মধ্যেও আমার বাবা-মা আমাকে স্কুলে দিয়েছিলেন। প্রাথমিকে তেমন কোন খরচ ছিল না আর বই পেতাম বিনে পয়সায়। কিন্তু বিপত্তি হল আমার বাবা যখন চাইলেন বগুড়া জিলা স্কুলে আমাকে ভর্তি করতে।

সেখানে ভর্তি হতে যায় যারা, তারা এক বছর ধরে নামী-দামী শিক্ষকের কাছে কোচিং করে। আমার তো সেরকম কোন পুঁজি ছিল না। সম্বল শুধু বাবার ইচ্ছে আর আমার ইচ্ছে-শক্তি। 

সে সময় কোনমতে থাকার মত একটু জায়গা আর কোনোদিন দুবেলা আর প্রায় প্রতিদিন একবেলা খাবার ছাড়া আর কিছু দেবার মত ছিল না বাবা-মার। আসলে আমরা ছিলাম দরিদ্রসীমার নিচের মানুষ।  

কোন এক শক্তি আমাকে সেই স্কুলে ভর্তির জন্য তাগিদ দিচ্ছিল। আগেও আমি অনেক কষ্ট করেছি। আমার এমন দিনও গেছে যে আমি শীতের সকালে লবণ-মরিচ দিয়ে ভাত খেয়ে স্কুলে গেছি। তবু আমি আমার বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু স্বপ্ন দেখতাম, এই আমিই একদিন জিলা স্কুলে পড়ব। 

অবশেষে আমি জিলা স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেলাম। আমার স্বপ্ন পূরণ হল।

এর পরে পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার পর একবেলা কম খেয়ে সেই পয়সায় পিএসসি পরীক্ষার আগে শেষ তিন মাস স্যারদের কাছে অতিরিক্ত পড়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিলাম। সব বিষয়ে আমার আলাদাভাবে শতকরা ৮০ নম্বরের বেশি ছিল। জেএসসিতেও সেই ফল ধরে রাখতে পেরেছিলাম। 

সেই দুঃসময় অনেকটাই কেটে গেছে। আমি এখন নবম শ্রেণির ছাত্র। আমার বাবা এখন একটা কাজ যোগাড় করতে পেরেছেন। এসব কষ্টের কথা হয়তো গোপন রাখাই উচিত। কিন্তু 'হ্যালো'র কাছে বলতে গিয়ে আমি সব কথাই তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম। জীবনে লড়াই করে তারপর হেরে যাওয়াতে লজ্জা নাই কিন্তু লড়াই জরুরি।

এ লড়াইয়ে জিতে আমি যেন শুধু ভালো ছাত্রই নয়, ভালো মানুষও হতে পারি।  

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com