একদিন ঢাকা হবে সুন্দর

স্কুলে টিফিনের সময় আমরা কজন ঠিক করে ফেললাম কীভাবে আমরা আমাদের শহর ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন রাখবো। আমাদের লক্ষ্য কি, কীভাবে কাজ করবো এসবসহ আরো কিছু নিয়ম ঠিক করা হলো। দিন দুয়েক পর থেকে আমরা ফরম ছাপিয়ে সদস্য সংগ্রহ শুরু করলাম।

প্রথমে সদস্য ছিলাম ছয়জন। আমরা সবাই মিলে প্রতিদিন টিফিনের সময় একত্রিত হতাম। আলোচনা করতাম। ময়লা ফেলে শহরটাকে অপরিষ্কার করা হচ্ছে, নোংরা করা হচ্ছে। এখানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয় একটু বৃষ্টি হলেই। মাঠ আর ঝিলগুলো দখল হচ্ছে। তাই ঠিক করলাম যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে হবে।

ঠিক করলাম আমরা রাস্তা থেকে আবর্জনা তুলে ডাস্টবিনে ফেলবো। এটা তো আর প্রতিদিন করা সম্ভব না। আবার বছরে একবার করলেও কার্যকরী হবে না। ঠিক করলাম মাসে অন্তত একবার করব। আর বিভিন্ন কারণে আমরা গাছ কাটছি। তাই আমরা গাছ লাগাতে বাড়ি বাড়ি বিনামূল্যে গাছ দিব। খালি জায়গায় গাছ লাগাবো।

আমরা এগিয়ে যেতে থাকলাম আমাদের মতো। ঠিক করলাম প্রথম কার্যক্রমের দিন, জুনের তিন তারিখ। আমার ওপর ছিল টাকা তোলার দায়িত্ব। কেউ টাকা দিয়েছে টিফিনের টাকা থেকে, কেউ জমানো টাকা থেকে। সব টাকা মিলিয়ে নিয়ে কেনা হলো গ্লাভস আর মাস্ক। আমাদের উদ্যম দেখে টাকা দিয়েছিলেন ইংরেজি শিক্ষক শম্পা ম্যাডামও। উৎসাহ দিয়েছিলেন অন্যান্য শিক্ষকরা।

প্রথম কার্যক্রমের দিন সবার মনে একটু সঙ্কোচ ছিল। আমাদের সাথে বড় কেউ নেই। রাস্তায় গ্লাভস আর মাস্ক পড়ে ময়লা তুলতে থাকবো- কেউ যদি ব্যাঙ্গ করে? সব সঙ্কোচ দূর করে আমরা কাজে লেগে গিয়েছিলাম। আমি, রূদ্র, রাইয়ান, তানভীর, দিগন্ত, রাউফুন আর তূর্য- এই সাতজন মিলে শুরু করেছিলাম অভিযান।

সেদিন খিলগাওঁ স্কুলের সামনে থেকে ময়লা কুড়িয়ে সেগুলো ফেলেছিলাম ডাস্টবিনে। পথে কেউ এসে দিচ্ছিল বাহবা আবার কেউ ব্যাঙ্গ করে চলে যাচ্ছিল। একজন বলল, এগুলো করলে কি নাম্বার পাবে? আবার স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেখলেন, ভিডিও করলেন, উৎসাহ দিলেন।

এভাবে চলতে লাগলো। তারপর জুলাইয়ে আবার আমাদের কাজ করলাম। অগাস্টে বন্ধ থাকলেও এ মাসে আবার আমরা কাজ করেছি। বিতরণ করেছি ১০০টির মতো লিফলেট। খিলগাঁও তালতলা মার্কেট থেকে এলাকার সি ব্লক পর্যন্ত রাস্তার দুধার থেকে আবর্জনা তুলে ডাস্টবিনে ফেলেছি।

আমাদের এ কাজ দেখে অনেকেই এমনকি আমার ক্লাসের বন্ধুরাও বলে, তোরা একাই দেশটা ঠিক করে ফেলবি? আমি ওদের বোঝাতে চাই শুরুটা এরকমই হয়। তবে উৎসাহ দেওয়ার লোকও কম নেই। সেদিন এক বৃদ্ধলোক বললেন, ‘খুব ভালো কাজ বাবা। সবার জন্য দোয়া করবো।’

আশেপাশে ডাস্টবিন না থাকায় আরেক লোক তার হাতের বোতল আমাদের ব্যাগে ফেললেন। 

যারা উৎসাহ দিচ্ছেন না তাদের জন্য পিছপা হবো না আমরা। কারণ আমরা জানি আমরা কোনো খারাপ কাজ করছি না।

আমরা স্বপ্ন দেখি একদিন ঢাকার রাস্তায় ময়লা থাকবে না। ময়লার দুর্গন্ধে নাক চাপা দিতে হবে না। যেখানে সেখানে ময়লার কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হবে না। ঢাকা হবে সুন্দর। ঢাকা হবে সবুজ। সেদিনই আমাদের  টিফিনের টাকা বাঁচানো কিংবা স্কুলে হেঁটে আসা দিনগুলো সার্থক হবে। সেদিনই পূরণ হবে আমাদের স্বপ্ন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com