সাইকেল চালানো শেখার কথা উঠলে আমার আম্মুর কথা আসবে সবার আগে। তিনি আমাকে অনেক উৎসাহ আর প্রেরণা দিয়েছেন। আম্মু চাইতেন আমি যেন সাইকেল চালানো শিখি। চেষ্টাও কম করেননি। শেখানোর জন্য অনেক ঠেলেঠুলে আমাকে বের করেছিলেন কয়েকদিন। কিন্তু তখন আর শেখা হয়নি।
একদিন আম্মুর সাথে গল্প করছিলাম। আম্মু বললেন, ছোটবেলায় তার সাইকেল চালানোর অনেক ইচ্ছা ছিল। কিন্তু মেয়ে বলে তাকে কখনও বাড়ির সাইকেলটা ধরতেই দেওয়া হয়নি, শেখানো তো অনেক দূরের কথা। এটা শোনার পর আমার একটু লজ্জাই লাগল। হাতের কাছে সাইকেল পেয়েও আমি চালানোটা শিখিনি আলসেমির কারণে!
মায়ের স্মৃতিটাই আমাকে চাগিয়ে দিল, সাইকেল চালানো শেখার সময় হয়ে গেছে। আর আলসেমি নয়। শুরু হয়ে গেলো সাইকেল চালানো অভিযান।
পরপর ঠিক চারদিন বিকেলে অনুশীলন করে সাইকেল চালানো শিখে ফেললাম। পিছনে ধরে রেখে চালানো শেখালো আমার চাচ্চু। আমার উৎসাহ দেখে প্রতিদিন শেখাতে আসতে চাচ্চুও কোনো গাফিলতি করলেন না। তবে সাইকেল চালাতে গিয়ে বিপত্তিও কম হয়নি।
এটা তেমন কঠিন কিছু নয়। কেউ যদি তিন-চার দিন টানা অনুশীলন করে তাহলেই সাইকেল চালানোটা শিখে ফেলা যায়। তবে শর্ত আছে।
অনুশীলনটা করতে হবে আগ্রহ নিয়ে আর ধৈর্যের সাথে। আর প্রথম দিকে এটাই করাটা হয়ে উঠেনি আমার। কখনও নিজের আলসেমি ছিলো আবার কখনো শেখানোর মানুষ ছিলো না। সব মিলিয়ে সাইকেল চালানোটা শিখতে দেরি হচ্ছিল বেশ।
প্রথম প্রথম শেখার পর একদিন এক ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগিয়ে হুড়মুড় করে পড়ে গিয়েছিলাম। ভাগ্যিস ট্রাকটা থেমে থাকা অবস্থায় ছিল। আরেকবার রগচটা এক আন্টির গায়ে সাইকেল লাগিয়ে দিয়ে বকা শুনেছিলাম খুব। এসব মনে হলে এখনও খুব মজা লাগে।
এখন যখন বিকেলে সাইকেলটা নিয়ে বের হই তখন এলাকার রাস্তা দিয়ে চক্কর দিতে দিতে হঠাৎ হঠাৎ চোখে পড়ে রাস্তার মানুষ ভ্রু কুঁচকে তাকাচ্ছে। আমি তাদের ভ্রু কুঁচকানো গায়ে মাখি না। কেনই বা গায়ে মাখতে যাবো? অন্যায় কাজ তো আর করছি না।
এ রকম দেখলে আমি হাসি হাসি মুখেই তাদের দিকে তাকানোর চেষ্টা করি। কখনও হেসেও ফেলি। আশেপাশের ভ্রু কুঁচকানো দৃষ্টিকে হাসি মুখে গ্রহণ করে নিজের আনন্দে থাকতে পারাটাই জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।