আমি রাজধানীর একটি সরকারি কলেজে পড়ছি। আমি উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ছেলে হয়ে জন্মেছি বলে সবকিছুতেই সুযোগ বেশি পাই। দ্বিধা ছাড়া ঘুরে বেড়াই এদিক সেদিক। বিকালে মাঠে খেলতে পারি। বন্ধুদের সঙ্গে ছুটোছুটি হুল্লোড় কিছুই বাদ যায় না।
Published : 20 Apr 2016, 05:35 AM
আর এজন্য আমাকে যে বাড়িতে খুব একটা সংগ্রাম করতে হয় তা কিন্তু নয়। অভিভাবক হয়তো ভাবেন ছেলেই তো কি হয়েছে। কিন্তু আমি আরিয়ান যদি মেয়ে হয়ে জন্মাতাম তাহলে সুযোগগুলো পেতাম তো?
আমি ৩৪টির বেশি বিজ্ঞান মেলা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। গিয়েছি দেশের বাইরেও। কিন্তু আমি যেখানেই উপস্থিত হয়েছি দেখেছি মেয়েদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। মেয়েরা ইচ্ছা করে আসেনি এটা আমি মানতে চাই না। কারণ আমার অনেক বান্ধবীকেই দেখেছি এসব তাদের আগ্রহ তুঙ্গে। কিন্তু বাসার অনুমতি মিলে না বলে বরাবরই এড়িয়ে চলে নানা অনুষ্ঠান।
ছোট থেকেই আমি মাঠে খেলি। কিন্তু আমার বয়সী কোনো মেয়েকে কখনও মাঠে ছুটোছুটি করতে দেখিনি। কেন দেখি না? ওদের যোগ্যতা নেই। নাকি ওদের সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা ওরা মেয়ে?
এমন অহরহ প্রশ্নের জবাব খুঁজে না পেয়েই এই বিষয়ে হ্যালোতে লিখতে বসেছি।
এমন অনেক জনকেই চিনি যারা ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়’ প্রবাদের সত্যতা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছে। আর কেউ কেউ প্রতিনিয়ত বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। ২০১৬ সালে আসেই অধিকাংশ পরিবারের এমন আচরণ আমাকে ব্যথিত করে।
কেউ কেউ যে করছে তা নয়। অনেক মেয়ে ও তার পরিবার এগিয়ে এসেছেন। মেয়েরা পাইলট হচ্ছেন, চিকিৎসক হচ্ছেন, প্রকৌশলী হচ্ছেন। অনেকে বেছে নেন সাংবাদিকতার মতো চ্যালেঞ্জিং পেশাকেও। তবুও সব ক্ষেত্রে তাদের সরব উপস্থিতি এখনও পাই না।
এ পর্যন্ত সামাজিক ও বিদ্যালয় ভিত্তিক তিনটি সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেছি।
যখন স্কুলে পড়তাম আমরা কয়েক জন মিলে গরীব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ দিয়ে সহায়তার উদ্দেশ্যে ‘ফেলো ট্র্যাভেলর’ নামে একটি সংগঠন চালু করি। এতে প্রায় ৪০ জন সদস্য ছিলাম। এরমধ্যে ১৭ জন ছিল মেয়ে। প্রায় আমাদের অর্ধেক। দলটির নেতৃত্বে ছিলাম আমি।
মেয়েরা নিজেদের উদ্যোগে যুক্ত হয় আমাদের সঙ্গে। কয়েক দিনের মধ্যে একজন দুজন করে সবাই মিটিঙে আসা বন্ধ করে দেয়। পরে জানতে পারলাম বেশিরভাগ মেয়েই বাসা থেকে অনুমতি পায়নি।
তাদের বাসার ফোন নম্বর নিয়ে সবার কাছেই ফোন করি আমি। অনেক অভিভাবক তো আমার সঙ্গে কথাই বলেননি। দুই একজন অভিভাবক অবশ্য আমাকে ভালো করে বুঝিয়ে বলেছিলেন, মেয়েদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কেন যুক্ত হতে নেই।
এক শিক্ষার্থীর মা বললেন, "বাবা আমি আর মেয়ে দুজনেই চাই নানা কাজে যুক্ত হতে। চাই আমার মেয়ে মানুষের সেবা করুক। কিন্তু ওদের পরিবারের কেউ এটা মানতে চায় না। ওরা খুব ধার্মিক তো।"
আমি খুব অবাক হলাম। ধার্মিক হলে মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসা যাবে না? ধর্ম কি বলেছে অসহায় মানুষকে সাহায্য করো না।?
উনাকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলাম আমরা যে কাজটি করছি সেটি একটি মহৎ উদ্যোগ। গরীব শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করব আমরা। এতে সৃষ্টিকর্তা খুশি হবেন। কিন্তু তিনি এসব শুনতে নারাজ।
‘বিজ্ঞান জগৎ’ নামে একটি বিজ্ঞান সংঘে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সেসময় দেখতাম, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অনেক ছেলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মেয়ে শিক্ষার্থীরা নিবন্ধন পাতায় নিজেদের নাম টুকে দিত। তবে হাতে গোনা দুই একজন ছাড়া বাকিরা অনুপস্থিত থাকত। পরে জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসতো, বাড়ি থেকে আসতে দেয়নি।
বলি কি একটু ভেবে দেখুন। সন্তানকে ঘরে আটকে রেখে তাকে বঞ্চিত করছেন না তো। হয়তো এখানে ওখানে ঘুরেই ও একদিন বিশ্ব জয় করে ফেলবে। দয়া করে আটকে রাখবেন না। ছেড়ে দিন দেখুন আপনার মেয়েও ছিনিয়ে আনতে পারে গৌরব।