প্রাকৃতিক ভাবে সমান অধিকার নিয়ে জন্মে সামাজিক বৈষম্যের শিকার কত মানুষ! এইসব বৈষম্যের শিকার মানুষেরা নানা প্রতিকূলতার মাঝে খেয়ে না-খেয়ে জীবন কাটান।কোনো ওভারব্রিজের নিচে, রাস্তার ধারে, ট্রেন লাইনে ও বাস স্টেশনে কিংবা বস্তির কোনো ঘুপচি ঘরে এদের দেখা মেলে।
Published : 15 Oct 2013, 11:09 AM
আমরা অনেকেই তাদের টোকাই,বস্তির শিশু বা পথশিশু বলে থাকি। অবহেলিত এই মানুষগুলোর কোনো সামাজিক মর্যাদা নেই। নেই তাদের ঘরে জন্ম নেয়া শিশু-কিশোরদের কোনো ভবিষ্যৎ। পথশিশুরা সমাজের একশ্রেণির মানুষের কাছে মায়ামমতাহীন নির্দয় আচরণের স্বীকার। এরা সমাজে সবসময় অবহেলিত।
বাবা-মায়ের স্নেহ-মমতাও বা তাদের জোটে কতটা? এসব শিশু নানা কারণে অভিবাবকহীন হয়ে পড়ে। দেখা যায় কখনো পরিবারের বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, পরিবারের অতিরিক্ত সদস্য সংখ্যা তাদের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। তাই জীবিকার অন্বেষণে পথে নামতে বাধ্য হয় তারা। সাধারণত এই শিশুদের কপালে ভালো কাজ জোটে না। বাধ্য হয়ে কলকারখানায়, ইটভাটায় কিংবা কোন দোকানে অথবা বাস আর রেল স্টেশনে শ্রম বেঁচে তারা।
তাই তাদের বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে অন্ধকার জগতে টেনে নেয়া সহজ হয়। জীবনের মায়াহীন অথবা শৈশব থেকে অনটন দেখতে দেখতে বড় হওয়ায় শিশুরা অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে। মাদক আর অস্ত্র চোরাচালানে নামেও অনেকে।
অল্প বয়সী হওয়ায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেয়া সহজ হওয়া অপরাধ জগতের লোকেরা তাদের ব্যবহার করে।
শৈশবে যখন বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা ও খেলাধুলার মেতে থাকার কথা তখন দেশের অনেক শিশু দারিদ্রের কারণে নানামুখী অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে। আর অনেক সময় দেখা যায়, এইসব মাদক প্রাচার করতে করতে কৌতুহল বশে নিজেও আসক্ত হচ্ছে মাদকে। ওদের অনেকে জানেই না মাদকের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে। যখন বুঝতে পারে তখন ফেরার সব পথ বন্ধ।
দেশে কত পথশিশু আছে তা হয় তো কারো কজাছেই নেই। বাংলাদেশে বর্তমানে শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা ৫০ লাখ। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম,টিএইচ নেদারল্যান্ডস ও পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে করা জরিপে দেখা যায়, ঢাকা শহরে কমপক্ষে ২২৯টি স্পট রয়েছে যেখানে ৯-১৮ বছরের শিশুরা মাদক সেবন করে। ২১টি স্থানে সূচের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ,৭৭টি স্থানে হেরোইন সেবন এবং ১৩১টি স্থানে গাঁজা সেবন করা হয়। ঢাকা শহরের ২৮টি থানায় ৪১০জন মাদকসেবী শিশুকে চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট প্রশ্নমালার আলোকে এসব তথ্য উঠে আসে।
অতি দারিদ্র শিশুদের পুষ্টিকর খাবার,আর্থিক সুবিধা দিয়ে স্কুলগামী করাতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে,প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য কোন টাকা পয়সা লাগে না। বিশেষ করে পল্লীবাসীদের মনে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। পথশিশুদের সেইফহোমের মাধ্যমে দিনে বা রাতে বিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার।
পথশিশুদের বিদ্যালয়মুখী করা এবং পুনর্বাসন বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে। যেভাবে দিনে দিনে শিশুরা অপরাধের সাথে জড়িত হচ্ছে এটা অব্যাহত থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।