পৃথিবীকে রক্ষা আর জলবায়ু পরিবর্তনে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে প্রতি বছর বিশ্ব পৃথিবী দিবস পালন করে থাকেন সারাবিশ্বের পরিবেশবিদেরা।
এবার এই দিবসেই ঘটে গেল এক চমকপ্রদ ঘটনা। গত ২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিবিসি জানায়, মঙ্গল গ্রহের কার্বন ডাই অক্সাইড এর অণু হতে নাসার বিজ্ঞানীরা এই প্রথম সফল ভাবে শ্বাস প্রশ্বাসের যোগ্য পাঁচ গ্রাম অক্সিজেনের পরমাণুকে পৃথক করতে পেরেছেন যা একজন সাধারণ নভোচারীর ১০ মিনিটের শ্বাসকার্য পরিচালনার জন্য যথেষ্ট।
নাসার ২০৩০ সালের "মুন টু মারস"(Moon to Mars) প্রোগ্রামের সফলতার সুযোগকে আরও তরান্বিত এবং আশাজাগানীয়া করে তুলল বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার।
মঙ্গলের পাতলা বায়ুস্তর হতে অক্সিজেন অণুর পৃথকীকরণের এই অভূতপূর্ব সফলতায় ভূমিকা রেখেছে নাসার বানানো ছয় চাকার যান “পারসেভারেন্স রোভার” (Perseverance Rover) যা মহাকাশে নয় মাস ভ্রমণের পর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলের লাল মাটিতে অবতরণ করে।
মঙ্গলে পৌঁছানোর সাথে সাথে এই অত্যাধুনিক রোবট নাসার “মক্সি”(MOXIE- Mars Oxygen In-Situ Resource Utilization Experiment) নামক পরিকল্পনার অধীনে অক্সিজেন অণুর পৃথকীকরণে নেমে পড়ে।
নাসার মতে এটি পৃথিবীর সর্বপ্রথম অক্সিজেন উৎপাদনকারী যন্ত্র না হলেও মহাকাশ মিশনে সফলভাবে ব্যবহার করা প্রথম যন্ত্র যা মানুষের মঙ্গল অভিযাত্রা ও অন্বেষণের স্বপ্নকে আরও বাস্তবে রূপান্তর করবে। যন্ত্রটি ইলেকট্রোলাইসিসের ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা যা অত্যন্ত তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইডের অণু হতে অক্সিজেন পরমানুকে আলাদা করে। অক্সিজেনের এই পৃথকীকরণে কার্বন মনোক্সাইড বর্জ্য পদার্থ হিসেবে উৎপাদিত হয় যা পরবর্তীতে মঙ্গলের বায়ুমন্ডলে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের আধিক্যই বেশি, এর পরিমাণ প্রায় ৯৬%। অক্সিজেনের পরিমাণ কেবলমাত্র ০.১৩%। পৃথিবীতে যার পরিমাণ ২১%। নভোচারীদের শ্বাস-প্রশ্বাস ও রকেটের জ্বালানি হিসেবে অক্সিজেনের গুরুত্ব অপরিসীম।
নাসার মতে, মঙ্গলের পৃষ্ঠ থেকে চারজন নভোচারীকে বহনকারী একটি রকেটে প্রায় ১৫ হাজার পাউন্ড (৭ মেট্রিক টন) জ্বালানির সাথে দরকার হবে, ৫৫৫ পাউন্ড (২৫ মেট্রিক টন) অক্সিজেন, যা জ্বালানির দহনে কাজে লাগানো হবে। পৃথিবী থেকে ট্যাঙ্কে করে ২৫ মেট্রিক টন অক্সিজেন নিয়ে যাওয়ার তুলনায় এক টন অক্সিজেন-রূপান্তরকারী যন্ত্রটি(MOXIE) মঙ্গল গ্রহে নিয়ে যাওয়া অনেক বেশি সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক। আবার নাসার পরিকল্পনা মতে ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহে বসবাস ও কাজ করা নভোচারীদের পুরো এক বছরে এক মেট্রিক টন অক্সিজেনের প্রয়োজন হতে পারে।
এসব ধারণার উপর ভিত্তি করে মক্সিকে প্রতি ঘণ্টায় ১০ গ্রাম অক্সিজেন উৎপাদন করার মতো সক্ষমতা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং পরের দুই বছরে বিভিন্ন পরিস্থিতি, গতির অধীনে মেশিনটি কমপক্ষে আরও নয় বার চালানোর পরিকল্পনার কথা নাসা বিবিসিকে জানায়।
নাসা অক্সিজেন উৎপাদন পরীক্ষা ছাড়াও পারসেভারেন্স রোভার এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ বছর আগের মঙ্গল গ্রহের প্রাচীন ও উন্নত প্রজাতির জীবাণুর জীবাশ্মের চিহ্ন অনুসন্ধানেও কাজ করে যাচ্ছে। অক্সিজেন পৃথকীকরণের এই প্রাথমিক সফলতার পর নাসার ভবিষ্যত চমকপ্রদ আবিষ্কারের দিকেই তাকিয়ে আছে বিশ্বের মহাকাশ ও কৌতুহলপ্রিয় কোটি মানুষ!