এমন সিনেমার মতোই একটা ঘটনা ঘটেছে ভারতের বিহার রাজ্যে। এ রাজ্যের ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরী সেই গল্পের নায়ক।
দুই মাস আগে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ভারতে লকডাউন ঘোষণা করা হলে অনেক শ্রমজীবীর মতো শহরে আটকে যায় বিহার রাজ্যের দারভাঙ্গার শ্রমিক মোহন পাশান ও তার মেয়ে জ্যোতি কুমারি।
তারা আটকে পড়েছিলেন হরিয়ানা রাজ্যের গুরগাঁওয়ে। সেখানে রিকশাচালকের কাজ করতেন জ্যোতির বাবা।
একদিকে রিকশা চালানো বন্ধ, অন্যদিকে বাড়ি ভাড়ার জন্য বাড়িওয়ালার চাপ! কিন্তু পকেটে মাত্র ৬০০ রুপি। তাই বাড়িতে ফেরা ছিল বাবা-মেয়ের জন্য অতীব জরুরি। কিন্তু কোনোভাবেই তারা ফেরার পথ পাচ্ছিলেন না।
ছয় হাজার রুপির বিনিময়ে এক ট্রাক চালক তাদের নিতে রাজি হলেও এত টাকা তাদের কাছে ছিল না। কোনো উপায় না পেয়ে জ্যোতি কুমারি সিদ্ধান্ত নেয় সে নিজেই বাবাকে নিয়ে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি যাবে। 'ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়' এই প্রবাদটা এক্ষেত্রে যথার্থ।
প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি নিয়ে বাবাকে পেছনে বসিয়ে সাইকেলে প্যাডেল মারতে শুরু করে জ্যোতি। ১০ মে যাত্রা শুরু করে ১৬ মে পৌঁছে যায় বাড়ি। ১২০০ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দেয় মাত্র সাত দিনে! এই হিসেবে দিনেই চালাতে হয়েছে ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার।
জ্যোতি কুমারি ইন্ডিয়ান টাইমসকে বলে, "যখনই আমি ক্লান্ত হতাম রাস্তায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতাম। পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতাম। বাবা আর আমি বিস্কুট আর পানি খেতাম। আমাদের কাছে অন্য কোনো খাবার ছিল না।"
প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল না হারানোর প্রতিজ্ঞা তাকে এই কাজটা করতে সাহায্য করেছে। বাবার আকুল চাহনিই তার শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করেছে।
সে আরো বলে, "অনেক জায়গায় কিছু মানুষ আমাদের খাদ্য ও পানি দিয়ে সাহায্য করেন। অনেকে রাস্তা চিনিয়ে সাহায্য করেন।"
উল্লেখ্য, অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া জ্যোতি কুমারি 'প্রভাত ফাউন্ডেশন' নামের স্থানীয় একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত।