দাবানলে জ্বলছে পৃথিবীর ফুসফুস

ব্রাজিলে আমাজনের জঙ্গলে হাজার হাজার জায়গায় আগুন জ্বলছে। গত এক দশকে এত ব্যাপক মাত্রায় সেখানে দাবানল সৃষ্টি হয়নি বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
দাবানলে জ্বলছে পৃথিবীর ফুসফুস

বিশ্বের মোট অক্সিজেনের ২০ শতাংশ উৎপাদিত হওয়ায় পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয় যে অ্যামাজনকে, তা কয়েক দিন ধরে জ্বলছে।

ব্রাজিলের অ্যামাজনিয়াটুকুতে এসময় আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় প্রায়শই দাবানলের ঘটনা ঘটে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে দেখলাম, ব্রাজিলিয়ান স্পেস এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী ব্রাজিলে অ্যামাজনকে উষ্ণমণ্ডলীয় বনাঞ্চলে ২০১৯ সালে রেকর্ডসংখ্যক দাবানলের ঘটনা ঘটেছে।

দ্য ন্যাশানাল ইন্সটিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (আইএনপিই) বলছে তাদের উপগ্রহ থেকে সংগৃহীত তথ্যে দেখা যাচ্ছে ২০১৮-র একই সময়ের তুলনায় এবছর আগুন লাগার ঘটনা ৮৫ শতাংশ বেড়েছে।

সরকারি হিসাব মতে, এ বছরের প্রথম আট মাসে ব্রাজিলের জঙ্গলে ৭৫ হাজারের বেশি দাবানল হয়েছে। ২০১৩ সালের পর এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। পুরো ২০১৮ সালে বনাঞ্চলে মোট আগুন লাগার সংখ্যা ছিল ৩৯,৭৫৯।

নাসার মতে, অ্যামাজন রেইনফরেস্ট তার আর্দ্র অবস্থার কারণে তুলনামূলকভাবে আগুন প্রতিরোধী অর্থাৎ পূর্বের দাবানলগুলো অধিক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়নি। কিন্তু খরার ফ্রিকোয়েন্সি এবং তীব্রতা বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে জড়িত।

প্রাকৃতিক কারণে এবং মানব সৃষ্ট কারণেও দাবানল হতে পারে। ব্রাজিলের অ্যামাজন অঞ্চলে গবাদি পশু পালন, চাষের প্রয়োজনে জমি পরিষ্কার করতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু শুকনো মৌসুমে এই আগুনের ব্যবহার দাবানলের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

তবে বিজ্ঞানীরা অ্যামাজন ফরেস্টের অগ্নিকাণ্ডেরর মূল কারণ হিসেবে গাছপালা কেটে ফেলা এবং বন উজাড়কে দেখছেন। অ্যামাজনে প্রতিবছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এছাড়া বনাঞ্চল ঘন হওয়ায় প্রতিবছর অ্যামাজন প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং বৈষ্ণিক উষ্ণায়ন প্রতিরোধে সাহায্য করে। কিন্তু যখন গাছ কেটে বা পুড়িয়ে ফেলা হয় তখন কার্বন শোষণ করার ক্ষমতা হ্রাস পায়।

প্রায় তিন মিলিয়ন প্রাণি ও গাছপালা এবং প্রায় এক মিলিয়ন আদিবাসীর বাসস্থান অ্যামাজনিয়া। বিগত তিন সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা আগুনের প্রভাবে কয়েক হাজার হেক্টর জমি পুড়ে ছাই হয়েছে, ঘর ছাড়া হয়েছে অসংখ্য প্রাণি। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বাস্তুতন্ত্র। নিয়ন্ত্রণহীন আগুন যেমন ছড়িয়ে পড়েছে জনমানবহীন এলাকায়, তেমনি ছড়িয়ে যাচ্ছে উত্তর ব্রাজিলের জনবহুল এলাকাগুলোতেও।

অ্যামাজনের দাবানলকে বৈষ্ণিক সংকট হিসেবে অভিহিত করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন গত বুধবার টুইটে লেখেন, "আমাদের বাড়িটি জ্বলছে। অ্যামাজন রেইনফরেস্ট পৃথিবীর ফুসফুস যা আমাদের গ্রহের অক্সিজেনের চাহিদার ২০ শতাংশ পূরণ করে। এটি একটি আন্তর্জাতিক সংকট।”

আসন্ন জি-৭ সম্মেলনে আমাজনে অগ্নিকাণ্ড আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com