এ বয়সেই আর্চির অস্ট্রেলিয়া দলে ডাক পাওয়ার স্বপ্ন পূরণের খবর চমকে দিয়েছে সবাইকে।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যারোসা ভ্যালিতে বাসা আর্চি শিলারের। সারাহ ও ড্যামিয়েন দম্পতির সন্তান আর্চি। সুযোগ পেলে ব্যাট আর বল নিয়ে বাবার সঙ্গে খেলায় মেতে উঠে ও।
ক্রিকেটের প্রতি তার অপার ভালোবাসা। ভালোবাসে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তী লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নের উদযাপন। হাসিখুশি আর্চির বিস্ময় জাগানিয়া এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কষ্টদায়ক এক বাস্তবতা।
জন্মের পরেই তার হৃদরোগ ধরা পড়ে। অন্যদের চাইতে তার হৃৎকম্পন অনিয়মিত। ইতোমধ্যেই ১৩ বার সার্জারিও হয়েছে। যখন প্রথম ওপেন হার্ট সার্জারি হয় তখন আর্চির বয়স ছিল মাত্র তিন মাস। নিজের রোগটার ব্যাপারেও ধারণা আছে আর্চির।
ও বলে, "আমার হৃৎপিণ্ড অন্যদের চেয়ে একটু ধীরে চলে। আমি তাই টুকটাক স্কুলও বাদ দেই। এর কারণে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা কঠিন হয়।"
এই ছোট্ট অর্চির ইচ্ছে একদিন নামকরা ক্রিকেটার হবে, খেলবে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। তার এই ইচ্ছেই পূরণ হতে যাচ্ছে।
একটি দাতব্য সংগঠন 'মেক আ উইশ’ এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আর্চি শিলারকে সুযোগ করে দেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। সংগঠনটি তিন থেকে ১৮ বছর বয়সী অসুস্থ শিশু যাদের জীবন হুমকির মুখে তাদের ইচ্ছে পূরণে কাজ করে।
আর্চি শিলারকে ফোন দিয়ে দলে ডাক পাওয়ার সুসংবাদ দেন অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার। সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ চলছিল তখন। সেখান থেকে ফোন দেওয়া হয় আর্চিকে। ভিডিও কলে ল্যাঙ্গার বলেন, "তোমার জন্য আমার একটি বিশেষ খবর রয়েছে। আমি তোমার ক্রিকেটের কিছু ভিডিও দেখেছি। আমি তোমাকে এটা জানাতে পেরে আনন্দিত যে তোমাকে বক্সিং টেস্টের স্কোয়াডে নেওয়া হয়েছে।"
২৬ ডিসেম্বর মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। আর ডিসেম্বরের ২২ তারিখেই রয়েছে আর্চির জন্মদিন। এটাই হয়তো তার জন্মদিনের সেরা উপহার হতে চলেছে।
আর্চিকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে ল্যাঙ্গার বলেন, "সে জীবনের কঠিন একটা সময় কাটিয়েছে হাসপাতালে। তাই আমরা কোনোভাবে তার মুখে হাসি ফোটাতে সহায়তা করতে চেয়েছি। অন্তত পক্ষে এটি আমরা তার জন্য করতে পারি।"
আর্চির মা সারা বলেন, "আর্চির যখন তিন সপ্তাহ বয়স তখন তার জন্মগত হৃদরোগ ধরা পড়ে। তখন থেকে আমাদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়।
তার বাবা ডোমেইন জানান, ক্রিকেটের প্রতি তার ছেলের ভালোবাসা প্রচুর। অর্চি স্বপ্ন দেখে বড় হয়ে টিম অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হবে।
এমন সংবাদে খুশিতে আটখানা হয়ে যায় আর্চি। তবে স্কোয়াডে নিলেও একাদশে খেলানোর ব্যাপারে আর্চিকে নিশ্চয়তা দেননি ল্যাঙ্গার। অবশ্য মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধে নামা ছোট্ট আর্চি ভীষণ সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী। নয়তো কী আর সে বলে, যে সুযোগ পেলে সে আউট করে দেবে ভারতের ভিরাট কোহলিকে!