ডলফিনের ‘সুখ’

প্যারিসের কাছে একটি মেরিন পার্কে গবেষকরা বন্দিদশায় ডলফিনদের সুখের অনুভূতি মাপার চেষ্টা করেছেন।
ডলফিনের ‘সুখ’

প্রাণিদের বন্দিদশা কেমন তা বোঝার জন্যই তারা এ প্রজেক্টে হাত দিয়েছেন। এর জন্য ডলফিনের প্রতিটি কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে।

বিবিসি ডটকম ওয়েবসাইটের বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিনিধি ভিক্টোরিয়া গিলের সোমবারে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে, অ্যাপ্লায়েড অ্যানিম্যাল বিহেভিয়ার সায়েন্সের একটি জার্নাল অনুসারে, তিন বছর ধরে এটি নিয়ে গবেষণা করছেন গবেষকেরা। তারা জানিয়েছেন, সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণিরা পরিচিত মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে চায়।     

গবেষণাটিকে পরিচালনা করেছেন ড. ইসাবেলা ক্লেগ যার নেতৃত্বে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা কাজ করেছেন। গবেষণাটি চলছে অ্যাস্টরেক্স পার্কে।   

ক্লেগ বলেন যে, ডলফিনেরা বন্দি অবস্থায় কেমন আচরণ বেশি পছন্দ করে সেটাই তারা জানতে চেয়েছেন।   

তিনটি কার্যকালাপের মাধ্যমে তারা ডলফিনের অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছেন। প্রথমত, ট্রেইনারকে তাদের সাথে খেলতে দিয়েছেন। তারপরে পুলের বিভিন্ন খেলনা দিয়েছেন এবং সবশেষে তাদের একা থাকতে দেওয়া হয়েছে।  

এই গবেষণার পর ক্লেগ জানান, তারা একটি আকর্ষণীয় ফলাফল পেয়েছেন। ডলফিনেরা তাদের পরিচিতদের সাথে যোগাযোগ করতে গভীরভাবে অপেক্ষা করে।  

ডলফিনেরা পানির ঠিক নিচেই লুকিয়ে ভেসে থাকে এবং ট্রেইনার যেদিক থেকে আসে সেদিকেই তাকিয়ে থাকে। তারা পুলের কিনারেই বেশি সময় ধরে থাকে, যেন ট্রেইনার আসার সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পায়।  

ক্লেগ আরও বলেন যে তারা চিড়িয়াখানা এবং ফার্মের অন্যান্য প্রাণির মাঝেও একই বিষয় লক্ষ্য করেছেন।

 প্রাণিরা বন্দিদশায় ভালো না খারাপ আছে এ নিয়ে ফ্রান্সে প্রচুর সমোলচনা চলে।

সম্প্রতি ফ্রান্সের সরকার অ্যাস্টেরিক্স পার্কের মত পার্কে ডলফিনের প্রজনন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখান করেছে।এরপর অ্যাস্টেরিক্স পার্কের ডলফিনেরিয়ামের পরিচালক বিরজিট মারসারা বলেন যে, ডলফিনদের জাত আলাদা রাখতে দেওয়াটা তাদের সুখী জীবনের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ তারা বন্যজীবন থেকে আলাদাভাবে বাঁচছে।

মারসারা মনে করেন, বন্য ডলফিনরা বনে সুখী এবং বন্দি ডলফিনেরা বন্দিদশায়। বন্দি ডলফিনেরা এখানেই জন্ম নিয়েছে এবং তাদের দেখাশোনা করাটাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।  

মারসারা এবং অ্যাস্টোরিক্স পার্কের ট্রেইনারের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, ডলফিনরা সুখী এবং সহজ জীবনযাপন করছে।

কিন্তু ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. সুসান সুলেৎজ যিনি সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণিদের আচরণের ওপর পড়াশোনা করেছেন, তিনি বলেন যে, একটি গবেষণা কখনই বলতে পারবে না, ডলফিনরা বন্দি অবস্থায় সুখী না বন্য অবস্থায়।

তিনি আরও মনে করেন, এটি একটি মূল্যবান আবিষ্কার যে, বন্দিদশায় ডলফিনরা মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে চাচ্ছে। এটি অন্য বুদ্ধিমান প্রজাতিদের সাথে আমাদের আচরণের ওপর প্রয়োগ করা যেতে পারে। কিন্তু একটি ডলফিনের কারো  যোগাযোগ করতে চাওয়াটার মানে এই নয় যে, তার দেওয়া জীবনযাপন পদ্ধতি ডলফিনটির পছন্দ।  

যুক্তরাজ্যের দাতব্য সংস্থা, হোয়েল অ্যান্ড ডলফিন কনজারভেশন অনুসারে বিশ্বের প্রায় ৫০ টি দেশে কমপক্ষে তিন হাজার 'দাঁতওয়ালা তিমি' প্রজাতির প্রাণি বন্দিদশায় রয়েছে। ডলফিনও এই প্রজাতিগুলির মধ্যে একটি। কিন্তু ড. ক্লেগ বলেন যে, এই সংখ্যা তিন নয় পাঁচ হাজার। এর চেয়ে বেশিও হতে পারে, যেগুলি নিবন্ধিত নয়।  

তিনি বলেন যে, দেড়শ বছর ধরে তিমি এবং ডলফিনদের বন্য অবস্থা থেকে অ্যাকোরিয়ামে আনা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এ থেকে তাদের জীবনযাপন, আচরণ, বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারছেন।   

তিনি আরও জানান, বন্দিদশায় রাখা সঠিক না বেঠিক সেটার উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে তিনি বলতে চাইবেন, এই আবিষ্কারের ফলে হাজারো ডলফিন যারা ডলফিনেরিয়ামে রয়েছে তাদের জীবনব্যবস্থার উন্নতি হবে।

তিনি এটাও বলেন যে, প্রাণিদের বন্দিদশায় রাখা উচিত কি না এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং এটি এই মুহূর্তেই তুলে ধরা উচিত। এই প্রশ্নের দুটি ভাগ আছে। প্রথমত, সত্যিই কী প্রাণিরা ভালো আছে? তাদের উদ্দেশ্য কী? এর উত্তর জানতে তাদের আচরণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

তিনি আরও যোগ করেন, যদি জানা যায় তারা সত্যিই ভালো আছে, তখন আরও কিছু গবেষণা করতে হবে। তারা কী আসলে মানুষের সাথে যোগাযোগে থাকছে এজন্য সুখী নাকি মানুষকে বিনোদন দিচ্ছে সেজন্য সুখী। যদি শুধুমাত্র তারা মানুষের বিনোদনের কারণে থেকে থাকে তাহলে এটা মোটেই ন্যায়সঙ্গত নয়।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com