পৃথিবী বদলে দিয়েছেন যারা

‘মহামানব আসে, দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে মর্ত্যধূলির ঘাসে ঘাসে। সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ, নরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক, এল মহাজন্মের লগ্ন’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা এই লাইন কটিতে ফুটে ওঠে নরলোকে জয়ডঙ্কা বাজাতে যুগে যুগে এমন সব মানুষ আসেন, যাদের জীবন, কর্ম, দর্শন ও ত্যাগ সমাজকে প্রগতির দিকে, সভ্যতার দিকে এগিয়ে নেয়।

এমন দশজন মানুষ-

সক্রেটিস

পৃথিবী বিখ্যাত দার্শনিকদের কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় প্রাচীন যুগের পশ্চিমা দার্শনিক সক্রেটিসের কথা। তিনি ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত দার্শনিক। প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার গণ্ডি খাটো হলেও তার জ্ঞানের পরিধি ছিল অগাধ। গবেষকদের তথ্যসূত্রে জানা যায়, তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৪৭০ সালে জন্ম নেন। এ্যলোপেকি গোষ্ঠীর এক সম্মানিত ব্যক্তির ঘরে জন্ম হয় তার।

তিনি এমন এক দার্শনিক চিন্তাধারার জন্ম দিয়েছেন যা ২০০০ বছর ধরে পশ্চিমা সংস্কৃতি, দর্শন ও সভ্যতাকে প্রভাবিত করেছে। সক্রেটিস ছিলেন এক মহান শিক্ষক, যিনি কেবল শিষ্য গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষায় বিশ্বাসী ছিলেন না। কোনো শিক্ষায়তন ছিল না। যেখানেই যাকে পেতেন তাকেই মৌলিক প্রশ্নগুলোর উত্তর বোঝানোর চেষ্টা করতেন।

সক্রেটিসকে তরুণ সম্প্রদায়ের চরিত্র হননের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। সব অভিযোগ বিবেচনায় এনে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

এথেন্সের জনগণ যখন গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেছিল, সে সময় সক্রেটিসও গণতন্ত্রের একজন সমালোচক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তাই অনেকে সক্রেটিসের বিচার ও মৃত্যুকে রাজনৈতিক বলে ব্যাখ্যা করেছেন।

ক্রিস্টোফার কলম্বাস

ক্রিস্টোফার কলম্বাস বিশ্ববিখ্যাত পর্যটকদের একজন। তিনি মনে করতেন পশ্চিম দিক দিয়ে আন্টলান্টিক পাড়ি দিয়ে দিয়ে এশিয়ায় পৌঁছাতে পারবেন। তার এই ভাবনাকে প্রমাণের উদ্দেশ্যে ১৪৯২ সালে তিনি শান্তা মারিয়া থেকে যাত্রা শুরু করেন। এশিয়ায় পৌঁছানোর পরিবর্তে তিনি যে দ্বীপে পৌঁছালেন তা ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামে পরিচিত। তার এই আবিষ্কারই বর্তমান আমেরিকার গোড়াপত্তন করে।  

উইলিয়াম শেকসপিয়ার

উইলিয়াম শেকসপিয়ার মূলত ইংরেজি সাহিত্যে একজন নাট্যকার হিসেবেই বিবেচিত। তিনি প্রথমে অভিনেতা হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং পরবর্তীতে কমপক্ষে ১৫৪টি কবিতা এবং ৩৭টি নাটক রচনা করেন। এগুলোর মধ্যে বিখ্যাত নাটক, হ্যামলেট, কিং লিয়ার, রোমিও ও জুলিয়েট, ম্যাকবেথ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া শেকসপিয়ার ইংরেজি ভাষায় প্রায় ১৭শ’র বেশি নতুন শব্দ সংযোজন করেন।  

চার্লস ডারউইন

প্রকৃতিবিদ চার্লস ডারউইন বিবর্তন তত্ত্ব প্রস্তাব করেন। তিনি এইচএমএস বিগল জাহাজে পৃথিবী ভ্রমণের সময় বিভিন্ন প্রাণির প্রজাতি পর্যবেক্ষণ করে তার এই তত্ত্ব প্রস্তাব করেন। ১৮৫৯ সালে তার বিখ্যাত বই ‘দ্য অরিজিন অব স্পিসিস বাই মিন্স অব নেচারাল’ প্রকাশের পর এর বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কারণ এই তত্ত্বে তিনি বাইবেল এবং অন্যান্য ধর্মের সৃষ্টিতত্ত্বকে অস্বীকার করেন এবং মানুষের পূর্বপুরুষ হিসেবে শিম্পাঞ্জির মতো প্রাণির কথা বলেন।

কার্ল মার্ক্স

কার্ল মার্ক্সের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চিন্তা পুরো পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে। তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক। তিনি এমন রাষ্ট্রনীতির প্রস্তাব করেন যেখানে সব মানুষ সমান হবে। তিনি তার তত্ত্ব বর্ণনা করেন ‘কম্যুনিস্ট ম্যানিফেস্টো’ ও ‘দাস ক্যাপিটাল’ বইয়ে। তার তত্ত্ব অবশেষে রুশ বিপ্লব এবং সমাজতন্ত্রকে চালিত করে। ১৯৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষ কম্যুনিস্ট শাসনের অধীনে চলে আসে।

করমচাঁদ গান্ধী

মহাত্মা করমচাঁদ গান্ধী তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আইনজীবী হিসেবে। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক নেতা হন। তিনি ভারতে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তার সাধাসিদে জীবনযাপন এবং ধর্মীয় সহনশীলতা তাকে শিষ্টাচার এবং শান্তির প্রতীকে পরিণত করেছে।

আলবার্ট আইনস্টাইন

আলবার্ট আইনস্টাইন ছিলেন বিশ্বের সেরা পদার্থবিজ্ঞানীদের একজন। তিনি এতটাই প্রতিভাধর ছিলেন যে তার নাম প্রতিভার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ১৯১৯ সালে যখন তার ‘জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি’ প্রমাণিত হলো তখনই তিনি সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়ে যান। ১৯২১ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। যদিও আইনস্টাইন শান্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন, কিন্তু মৃত্যুর পর তার আবিষ্কার আণবিক বোমা বানাতে সাহায্য করে।

নেলসন ম্যান্ডেলা

নেলসন ম্যান্ডেলা তার সম্পূর্ণ জীবন উৎসর্গ করেছিলেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে। ১৯৬৪ সালে সাউথ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার তাকে কারারুদ্ধ করে এবং ২৬ বছর বন্দি জীবন কাটান। তার মুক্তির পর ১৯৯০ সালে তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আফ্রিকায় বর্ণ বৈষম্য রোধ করায় ১৯৯৩ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ছিলেন একজন খ্রিস্টিয় দীক্ষাগুরু। যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন স্টেটে তিনি বর্ণবাদের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বিশ্বাস করতেন। ১৯৬৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। দুঃখের বিষয় ১৯৬৮ সালে তিনি গুপ্তহত্যার শিকার হন। তিনি সব সময় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে মহোত্তর প্রতিবাদের জন্য।

বিল গেটস

বিল গেটস প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেন হাই-স্কুলে পড়ার সময়। ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন মাইক্রোসফট এবং ১৯৯৩ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হন। ২০০০ সালে বিল গেটস ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠা করেন বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় দাতব্য প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম লক্ষ্য, পৃথিবীকে পোলিও এবং অন্যান্য মারণব্যাধি থেকে মুক্ত করা। 

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com